প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
সরিষার ফলন ও দামে চাষি খুশি
চাষের শুরুর দিকে যখন সরিষার ফুল আসতে শুরু করে, ঠিক তখনই তিন-চার দিনের টানা বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। লাভ হোক আর লোকসান হোক, বুকভরা আশা নিয়ে চাষবাসে লেগে থাকাই যেন কৃষকের ধর্ম। শত বাধা ও উদ্বেগ পেরিয়ে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে সিরাজগঞ্জের চৌহালী এবং পাবনার চাটমোহরে। দামও ভালো। সব মিলে সরিষা চাষিরা খুশি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) : সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় এখন বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চোখে পড়বে সরিষার খেত। এরই মধ্যে পাকতে শুরু করেছে আর চাষিরাও সরষে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অল্পদিনের আবাদে কৃষকদের তেমন একটা খরচ হয় না। আমন ধান উঠার পর পর জমিতে সরিষা বোনা হয়। এবার দাম ভালো। রোদে শুকানো প্রতি মণ সরিষার দাম আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। আর জমি থেকে তুলে সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করলে দাম পড়ছে ২ হাজার ২০০ টাকা প্রতি মণ।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় উপজেলার উত্তর খাষকাউলিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল ছাত্তারের সঙ্গে। তিনি গত বছর ৪ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলেন। ফলন ভালো হয়েছিল। এ বছর আবাদ করেছেন প্রায় ৬ বিঘা। সরিষায় পাক ধরেছে। অনেকে সরিষা উঠাতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে আর তেমন ঝুঁকি নেই। বাজারে দামও ভালো।
পশ্চিম খাষকাউলিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি চরে ১২ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলেন। ফুল আসার সময় তিন/চার দিনের বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশায় খুব চিন্তিত ছিলেন তিনি। সব শেষে এখন ফলন ভালো।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ২ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৯৪ হেক্টর। এর মধ্যে দেশি জাত ও উচ্চফলনশীল বারি সরিষা-১৪, ৮৩০ হেক্টর, বারি সরিষা-১৫, ২১০ হেক্টর, বারি সরিষা-১৮, ০৫ হেক্টর, টরি সরিষা-৭, ১ হাজার ১১০ হেক্টর ও রাই-৫, ৭০ হেক্টর জাতের সরিষার আবাদ করেছেন চাষি। যা গত বছরের চেয় ১৫ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ১.৪ মে.টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরিষা চাষিদের যথাযথ পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জেরিন আহমেদ জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ১১০০ কৃষকের মাঝে কৃষি উপকরণ, উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বীজ ও রাসায়নিক সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল।
এ বছর সাতটি ইউনিয়নে ২ হাজার ২৩২.৫ মে.টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা রাখছি। এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি সরিষা উঠানো হয়েছে, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী সাপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি উঠানো হবে।
চাটমোহর (পাবনা) : চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে পাকা সরিষা তোলা শুরু হয়েছে। ফলন ও দাম ভালো থাকায় কৃষক খুশি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে মোট ৬ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বিএডিসি উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে কৃষকদের সরিষা বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। উন্নত ফলনশীল জাতের বারী-৯, ১১, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮, বিনা-৪, টরি-৭ জাতের সরিষার চাষসহ স্থানীয় জাতের সরিষার চাষ হয়েছে।
চাটমোহর উপজেলার পাকপাড়া গ্রামের সরিষা চাষি জামাল উদ্দিন জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। এরই মধ্যে এক বিঘার সরিষা তুলেছেন। বাকি সরিষা দু-একদিনের মধ্যে তুলবেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ বলেন, উপজেলায় সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ এবং সংরক্ষণে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরিষার ফুল ও পাতা জমির উর্বরতা বাড়ায় বলে তিনি জানান। শুকানো অবস্থা ভেদে বর্তমানে সরিষা ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
"