সংসদ প্রতিবেদক
সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে ৮ লবিস্ট নিয়োগ করেছে
যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াতের ‘লবিস্ট’ নিয়োগের বিষয়ে জাতীয় সংসদে বিবৃতি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, এসব ‘অসত্য’ তথ্যের বিপরীতে সত্য তুলে ধরতে সরকার সেখানে ‘পিআর প্রতিষ্ঠান’ নিয়োগ দিয়েছে। গতকাল বুধবার সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি ‘লবিস্ট ফার্ম’ নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি তিনটি ‘লবিস্ট ফার্ম’ নিয়োগ করে।
তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে। লবিস্টকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে সাহায্য সহায়তা বন্ধ করে দিতে বলেছে। উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয়, তার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে গত রবিবার জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করা সে দেশের আইনে একটি বৈধ প্রক্রিয়া। ভারত, পাকিস্তান, কাতার সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু লবিস্ট নিয়োগের উদ্দেশ্য কী সেটা হলো মুখ্য।
‘বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। ২০১৪ সালে জামায়াত একটি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এজন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করে।
‘বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার প্রতি বছর প্রতি মাসে রিটেইনার ফি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। এই তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।’
পরররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাঠে ময়দানে যারা বিএনপির কর্মী আছেন, তারা কেউ চাইবেন না যে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাক। তাদের কিছু নেতৃস্থানীয় মানুষ তাদের অগোচরে এমন কাজ করেছেন। বিএনপি সদস্যরাও নিশ্চয় চান না দেশ রসাতলে যাক। তাদের নেতারা কীভাবে এভাবে লিখতে পারেন?’
গত ১৭ জানুয়ারি সংসদে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিস্ট ফার্মের পেছনে বিএনপি দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।
বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে কত টাকা খরচ করেছে, তার হিসাব সরকারের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। পরে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, তারা নন, সরকারই যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগে দিয়ে রেখেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার লবিস্ট নিয়োগ করেনি। পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। একটা হচ্ছে সিনেট, স্টেট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে লবি করে, তদবির করে। সরকার সে ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেনি।
‘সরকার যেটা করেছে, অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য যেগুলো ছড়ানো হয়, তার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো জানানোর জন্য। বিজিআর নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সময় যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধে বানোয়াট তথ্যের বিরুদ্ধে যাতে লিখতে পারে।’
‘বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার বন্ধের জন্য’ বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয় জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য এবং বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের জন্য, অপপ্রচারের বদলে সত্য কথা বলার জন্য বাংলাদেশ সরকার জনগণের মঙ্গলের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেটা নেবে। তার একটি নমুনা হচ্ছে বিজিআর। তারা অসত্য তথ্য দিচ্ছেন, তখন বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিএনপির ‘কিছু কিছু লোক’ জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের সংসদকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করার জন্য। এ ধরনের কাজ যারা করে, তাদের প্রতি ধিক্কার। বিএনপি যে এত ফার্মে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে এত টাকা ব্যয় করলেন, তারা কি তাদের দলের আয় ব্যয়ের হিসাবে দেখিয়েছেন? তারা কি তাদের সব নেতার সঙ্গে আলোচনা করে এই কাজগুলো করেছে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় যান কী করেন, সে খোঁজ নেওয়ার জন্য এফবিআইয়ের প্রতি অ্যাপ্রোচ করে বিএনপি নেতার ছেলে সিজার। তারা জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্র করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সিজার ও তার সহযোগীদের সাজাও হয়েছে।’
"