নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২২

বায়ুদূষণে বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি

ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে দুই হাজার টন ধুলাবালি আকাশে ওড়ে। এর সবই উড়ে চলে যায় না, কোথাও কোথাও এগুলো থেকে যায়। কুয়াশার সঙ্গে মিশে ধুলাবালি ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। সম্প্রতি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে দুই হাজার টন ধুলাবালি আকাশে উড়ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে মানুষের ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বাতাসের মধ্যে যে মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা ‘পিএম ২.৫’ থাকে তা বায়ুর সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে আমাদের রক্তনালির মধ্য দিয়ে সারা শরীরে পৌঁছে যায়। ফলে আমাদের লিভার ও কিডনির মতো অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে। শুধু বিকলই নয়, এক সময় এর কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।

রাজধানীর বায়ুমান হঠাৎ এমন খারাপ কেন হলো- এ বিষয়ে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের মন্তব্য ‘অনেক দিন বৃষ্টি নেই। বাতাস শুষ্ক। এ কারণে ধূলিকণা সহজে উড়তে পারছে। এছাড়া বায়ুদূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই। এসব কারণে দূষণের পরিমাণ বাড়ছে।’

আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে দুই হাজার টন ধুলাবালি আকাশে ওড়ে। এর সবই উড়ে চলে যায় না, কোথাও কোথাও এগুলো থেকে যায়। কুয়াশার সঙ্গে মিশে ধুলাবালি ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। এজন্যই আমরা ভর দুপুরেও ধোঁয়াশা দেখি।’

এদিকে, টানা চার দিন বিশ্বে বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে থাকা ঢাকার বাসিন্দাদের মনে এখন এমন প্রশ্নই ঘুরছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান যাচাইবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ বলছে, ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল গড়ে যথাক্রমে ২২৬, ২৩৩, ২৪৩ ও ২৫৮। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’।

২১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল ৩৭২। ওই সময় বায়ুতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা ‘পিএম ২.৫’ প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৩২২ মাইক্রোগ্রাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, যা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুর মান সূচক শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ‘ভালো’ বা স্বাস্থ্যবান্ধব বলে গণ্য হয়। এর বেশি হলেই শুরু হয় ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি’। সেই হিসাবে ঢাকাবাসী ভয়াবহ ‘রেড অ্যালার্ট’-এর মধ্যে আছেন।

বায়ুদূষণ যদি এভাবে চলতে থাকে তবে শ্বাসতন্ত্রের রোগ অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ক্যানসারের মতো রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দূষণের শুরুটা বায়ু থেকে হলেও শেষ হচ্ছে জনজীবন ও প্রকৃতি বিনষ্টের মধ্য দিয়ে। যা পুরো পৃথিবীর জন্যই মারাত্মক হুমকি।

বায়ুদূষণের কারণ ও বিরূপ প্রভাব : বায়ুদূষণ বাড়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি হচ্ছে ‘উৎস’, আরেকটি হচ্ছে ‘কারণ’। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক কিছু বিষয় (আবহাওয়া ও জলবায়ু), নগর পরিকল্পনার ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা, আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক কারণ এবং অধিক জনসংখ্যার ঘনত্ব।

বর্তমান বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর এমন প্রশ্নের জবাবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকার বায়ুমান পৃথিবীর দূষিত জায়গার মধ্যে অন্যতম। এটা নিয়ে জাতীয়ভাবে তো বটেই, আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকেও নানাভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বায়ুদূষণ হলে মানুষসহ সব প্রাণী, উদ্ভিদ ও জলজপ্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে শ্বাস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। যেমন- ঠান্ডা, হাঁচি, কাশি ইত্যাদি। যাদের অ্যাজমা বা অ্যালার্জি আছে, সেগুলোও বেড়ে যায়। নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা বেড়ে যায়। দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে মানুষের ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বাতাসের মধ্যে যে মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা ‘পিএম ২.৫’ থাকে তা বায়ুর সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে আমাদের রক্তনালির মধ্য দিয়ে সারা শরীরে পৌঁছে যায়। ফলে আমাদের লিভার ও কিডনির মতো অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে। শুধু বিকলই নয়, একসময় এর কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।

এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বায়ুদূষণ রোধে সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেছেন, ‘মহামান্য হাইকোর্ট বায়ুদূষণ রোধে আমাদের মন্ত্রণালয়কে একটা নির্দেশিকা তৈরির জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের এক্সপার্টদের সঙ্গে কথা বলে বায়ুদূষণ রোধে একটা নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নির্দেশিকা হাতে পাওয়ার পর এটি আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close