মো. বশির উদ্দিন, ডেমরা (ঢাকা)

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২২

‘স্বস্তি’র টিসিবি পণ্যেও ভোগান্তি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে হিমশিম খাওয়া মানুষের কাছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের ওপর আগ্রহ বাড়ছেই। আগে স্বল্প আয়ের মানুষ টিসিবির পণ্য কিনলেও এখন সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী- সবাই এখান থেকে পণ্য কিনছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনতে ভোগান্তি জেনেও স্পটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাদ্য হচ্ছে এসব মানুষ।

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে ডেমরায় চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তাই প্রতিনিয়ত টিসিবির পণ্য কিনতে দীর্ঘ হচ্ছে দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের লাইন। প্রতিদিন ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়াতে যেন প্রতিযোগিতা।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনের ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো আইনশৃঙ্খলার সদস্য থাকেন না। ফলে অনেকেই একাধিকবার পণ্য কিনে তা বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছেন। যে কারণে সাধারণ ক্রেতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গতকাল সোমবার টিসিবির পণ্য বিক্রির কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা যায়, টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ লাইন। তবে কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছে না, অধিকাংশই মাস্কও ব্যবহার করেনি। আবার শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কোনো শৃঙ্খলাকর্মী না থাকায় অনেক নারীকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এদিকে, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই ক্রেতারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। জায়গা হারানোর ভয়ে লাইন থেকে সরছেন না তারা। নিজেদের মধ্যে জায়গায় দাঁড়ানো নিয়ে ঝগড়া করতেও দেখা যায়। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাক না আসায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মহিলা ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ট্রাকে চাহিদার চেয়ে পণ্য কম থাকায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেককে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা যায়। ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার সড়কে ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়েছিলেন ৬৫ বছর বয়সি বৃদ্ধ কহিনুর বেগম। রবিবার টিসিবির পণ্যক্রয়ের জন্য সিরিয়াল দিলেও পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় খালি হাতেই বাড়িতে ফিরতে হয় তাকে। সেজন্য গতকাল সোমবার সকাল-সকাল এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। শুধু রোকেয়া বেগমই নন, টিসিবির তেল, ডাল, চিনি কেনার জন্য ব্যাগ হাতে এমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকেই।

ডেমরা এলাকার টিসিবির ট্রাকের পাশে শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুমাইয়া বেগম জানান, করোনার আতঙ্কে শিশু বাচ্চাকে কোলে নিয়ে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনের ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো আইনশৃঙ্খলার সদস্য না থাকায় অনেকেই একাধিকবার পণ্য ক্রয় করছেন আবার অনেকে একবারও পাচ্ছেন না ।

অন্য গৃহবধূ রোকসানা আক্তার বলেন, ‘এক পরিবারের তিন-চারজন করে পণ্য নিয়ে গেছে। আবার লাইনে দাঁড়িয়েছে। তাদের বারবার দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমরা সকাল থেকে লাইনে আছি, আমাদের দিচ্ছে না। আমরা কি পণ্য নেওয়ার উপযুক্ত কি না? তাদের কোন প্রক্রিয়ায় বারবার পণ্য দেওয়া হচ্ছে। কোনো বাধা দেওয়া হয় না কেন। কিছু বললে বিক্রেতার লোকজন খারাপ আচরণ করেন।’

সারুলিয়া বাজারে হাসমত মিয়া নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, ‘ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে দেখছি, সরকারি পণ্য বিক্রি হচ্ছে অথচ সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। টিসিবির ডিলার যা ইচ্ছে তাই করছে। পণ্যবাহী গাড়ি সকাল ১১টায় আসে, কোনো দিন ২টার পরেও আসে, এতে পড়তে হয় চরম বিপাকে। আবার কোনো দিন গাড়ি আসে না বলে তিন-চার ঘণ্টা অপেক্ষা করে খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়। গাড়ি আসার নির্দিষ্ট সময় না থাকায় আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

হুড়োহুড়ি করে হঠাৎ লাইনে এসে পণ্য কিনতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করে বাদল ব্যাপারী নামের এক যুবক বলেন, বাধ্য হয়েই টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে হচ্ছে। বাজারে দাম আগুন। মানুষ আসবেই। চাহিদা বাড়বেই। কিন্তু ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আনছেন না। ফলে বিপত্তিটা। ট্রাকও সেই রকম ভর্তি থাকে না। আগে থেকেই অনেক মানুষ অপেক্ষা করে। আমরা যারা হঠাৎ দেখি পকেটে টাকা আছে দামেও কম কিনে ফেলি।

বাজারে বর্তমানে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। টিসিবির ট্রাকে সে তেল মিলছে ১০০ টাকা লিটার। এতে ২ লিটার তেলে প্রায় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা সাশ্রয় হয়। ডাল বাজারে মানভেদে ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি। টিসিবির ট্রাকে ডাল পাওয়া যায় ৬০ টাকা কেজি। চিনি বাজারে ৮০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি। টিসিবির ট্রাকে ৫৫ টাকা কেজি। জনপ্রতি টিসিবির ট্রাক থেকে ২ লিটার তেল ২ কেজি ডাল ও ২ কেজি চিনি কিনতে পারেন। এতে অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ টাকা সাশ্রয় হয়।

গত ৩ জানুয়ারি থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে চারটি খাদ্য পণ্য বিক্রি শুরু করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে এসব পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করবে সরকারি বিপণন সংস্থাটি। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলবে আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে শুক্রবার পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close