গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২২

বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি এনআইডিতেই

স্বাধীনতার সূর্যসন্তান ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’দের স্বীকৃতি মিলছে জাতীয় পরিচয়পত্রেই (এনআইডি)। মুক্তিযোদ্ধারা ধাপে ধাপে তাদের স্মার্ট এনআইডি কার্ডে এই গৌরবময় স্বীকৃতি লাগাতে পারবেন। দেশের প্রথম সারির ১০০ জন প্রথমে এই সম্মানে ভূষিত হবেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে দিয়ে সম্মানজনক এই স্বীকৃতির উদ্বোধন করাতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিকতা। এই তালিকায় আরো থাকছেন মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সদস্য এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নুরুল হুদা। পরে পর্যায়ক্রমে পাবেন সবাই। বিদেশ ভ্রমণসহ নানা বিড়ম্বনা এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সম্ভাব্য সময় ধরে সম্প্রতি বঙ্গভবনে ইসি থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে গতকাল রবিবার বিকাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এ চিঠির ফিরতি জবাব আসেনি; অপেক্ষায় আছে কমিশন।

জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি স্মার্টকার্ডে লেখার জন্য আমরা কাজ করছি। নামের আগে লাগানো যাচ্ছে না সম্মানজনক এই স্বীকৃতি। কারণ, নামের আগে লাগালে বিদেশ ভ্রমণসহ নানা জায়গায় গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তাই তথ্য-সংবলিত ইউনিক চিপের নিচে দৃশ্যমান স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখা থাকবে-এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

অশোক কুমার বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নিজেও মুক্তিযোদ্ধা। তাই অনুষ্ঠানটি মহামান্যকে দিয়ে উদ্বোধনের সম্মতি পেতে চিঠি দিয়েছি; এখনো খবর আসেনি। করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। দেশের ১০০ ভিআইপিকে এই কার্ড প্রদানের মাধ্যমে উদ্বোধন হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সম্ভাব্য সময় ধরে এগোনো হচ্ছে।’

এনআইডি এবং ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের বিরল এই সম্মান দেখিয়ে স্মার্টকার্ডে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি লেখার এই চিন্তাটির প্রবক্তা-ও সিইসি নিজেই। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের এই কমিশনের পাঁচ বছর পূর্ণ হবে; ওই দিন নতুন কমিশন যোগ দিবেন। এর আগে সিইসির নেওয়া উদ্যোগটি সীমিত পরিসরে হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে তৎপর কমিশন। এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য এনআইডি ও ইসির কর্মকর্তারা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানের দায়িত্বরত উপসচিব দেবাশীষ নাগের সঙ্গে এ বিষয়ে সাক্ষাৎ করে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বিরাট। তাই গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ৫০০ জনের নিচে একটি তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া জামুকা থেকে শতাধিক ব্যক্তির আরেকটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। এসব তালিকায় কারা মৃত এবং জীবিত তা শনাক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করছে কমিশন।

সূত্রমতে, গত ১৮ ডিসেম্বর কমিশন সভায় প্রথমে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। স্মার্টকার্ডের ডিজাইনকে প্রাণবন্ত ও শিল্পের তুলিতে আঁকা স্বচ্ছ করতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে। এক্ষেত্রে স্মার্টকার্ডের চিপের নিচে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ওপরে লোগো থাকবে চিপের ওপরে। তবে, সময় স্বল্পতায় এই ভাবনায় এই ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এমনকি করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে সময়ে পরিবর্তন আসতে পারে।

এনআইডি উইংয়ের নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. নূরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একটু সম্মানিত করার চেষ্টা আমাদের। তাদের এত অবদান, এটুকু আমরা করতেই পারি। যেহেতু এনআইডিকেন্দ্রিক বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাই তারা যাতে স্মার্টকার্ড দেখিয়েই নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেন, এটাই উদ্দেশ্য।

এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা চাচ্ছি তাদের স্মার্টকার্ডে বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দ দুটি যোগ করতে। এক্ষেত্রে নামের আগে বা পরে নয়, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অর্থাৎ স্মার্টকার্ডের চিপের নিচ দিয়ে এই লেখাটা থাকবে। আমাদের সার্ভারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি জায়গা থাকবে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য থাকবে। বিষয়টি শিগগিরই বাস্তবায়নের দিকে যাব আমরা।

জানা যায়, ইসির এনআইডি সার্ভারে প্রায় ১১ কোটি ১৭ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে। শিগগিরই নতুন ভোটারদের তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম হাতে নেবে ইসি। নতুন কমিশন এই উদ্যোগ দিয়ে তাদের কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হতে পারে। এদের প্রায় সবার লেমিনেটিং জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। আর স্মার্টকার্ড রয়েছে সাড়ে ছয় কোটি মানুষের।

২০০৭ সালে দেশে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুতির কাজ হাতে নেয় ইসি। পরবর্তী সময়ে তার ভিত্তিতেই দেওয়া হয় এনআইডি। এরপর ২০১১ সালে এসে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় স্মার্টকার্ড প্রকল্প হাতে নেয় নির্বাচন কমিশন। কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য এর আগে আলাদা কোনো স্মার্টকার্ড ডিজাইন করা হয়নি। বর্তমানে আইডিয়া প্রকল্প-২ হাতে নেওয়া হয়েছে। দুই হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয়ে এই প্রকল্প আগামী ২০২৫ সালে শেষ হবে। লক্ষ্য সব নাগরিককে ইউনিয়ন নম্বর সংবলিত স্মার্টকার্ড দেওয়া।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close