মো. বশির উদ্দিন, ডেমরা (ঢাকা)

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

নাব্যতা সংকটে বালু নদ বাল্ক হেডজট

রাজধানীর কোলঘেঁষা বালু নদে দেখা দিয়েছে চরম নাব্যতা সংকট। এতে আটকে যাচ্ছে বালুবাহী ছোট-বড় বহু বালুভর্তি বাল্ক হেড। চার দিন ধরে ঢাকার ভাটারা থানাধীন বালু নদের বেরাইদ এলাকায় মক্কা-মদিনা-৫, টিউলিপ ও আঞ্জুমান-২ নামে ২৬ হাজার ফুটের তিনটি বড় বাল্ক হেড নাব্যতা সংকটে আটকে যাওয়ায় দীর্ঘ প্রায় দুই কিলোমিটার বাল্ক হেড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর শুষ্ক মৌসুমে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে বাল্ক হেড বিনিয়োগকারীরা কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে বাল্ক হেড শ্রমিকের মজুরিতেও পড়েছে ভাটা। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খনন বা ড্রেজিংয়ের অভাবে কয়েক বছর ধরে বালু নদের ফকিরখালী, বেরাইদ, নাওড়া ও নগরপাড়া এলাকায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। এসব এলাকায় বাল্ক হেড চলাচল করার জন্য অন্তত ১২ হাত পানির প্রয়োজন হয়। সেখানে এসব এলাকায় এখন সাত হাত পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ নদের ৩১টি মৌজায় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ২০১৩-১৪ সালে রক্ষণাবেক্ষণ (মেইনট্যানেন্স) ড্রেজিং করা হয়। তারপর আর কোনো খনন বা ড্রেজিং করা হয়নি বলে নদের তলদেশ অনেক ভরাট হয়ে গেছে। এ নদ দিয়ে বাল্ক হেডের মাধ্যমে বালু বহন করে শহরের নিম্নাঞ্চল ভরাট করে আধুনিক নগর গড়া হচ্ছে। অথচ নাব্যতা সংকটের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকটে এ নদ দিয়ে ১২০০ থেকে ১৬০০ ফুটের চেয়ে বড় বাল্ক হেড চলাচল করতে পারে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার খিলগাঁও থানাধীন বালু নদের ইটাখোলা থেকে ইদারকান্দি, ফকিরখালী ও ভাটারা থানাধীন বেরাইদ বাজার এলাকা পর্যন্ত বালুভর্তি বাল্ক হেডের দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়েছে। নাব্যতা সংকটের কারণে এ জট চলছে চার দিন ধরে। এ কারণে জোয়ারের পানির অপেক্ষায় রয়েছে দীর্ঘ প্রায় দুই মাইলের বাল্ক হেড যানজট। তা ছাড়া প্রতি বছরই ঢাকার বালুরপাড়, ফকিরখালী, ইদারকান্দি, বেরাইদসহ বালু নদের অধিকাংশ এলাকায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। নদের তলদেশ এরই মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বেরাইদ বাজার এলাকার বাল্ক হেড ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, বড় ৩টি বাল্ক হেড বালু নদে প্রবেশ করায় এ দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তারা জানা সত্ত্বেও কেন এত বড় লোড জাহাজ এ নদ দিয়ে আনল বুঝলাম না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (ইআরপিডিএফ) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন বলেন, বালু নদে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে বৃহৎ পরিকল্পনা প্রয়োজন, যা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। একই সঙ্গে নদী বাঁচাতে জলাবায়ু ঝুঁকি রাশের লক্ষ্যেও কাজ করছি। সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে টঙ্গী নদীবন্দরের সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা সমর কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘নাব্যতা সংকট বালু নদে চরম। জরুরি ভিত্তিতে খনন প্রয়োজন, প্রয়োজন বৃহৎ পরিকল্পনার। জোয়ারের পানি না আসা পর্যন্ত এ যানজট নিরসন হবে না। অনেকভাবে চেষ্টা হচ্ছে। ১২ হাত গভীর পানির প্রয়োজন, অথচ পাওয়া যাচ্ছে সাত হাত।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close