নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

বাউলের ছদ্মবেশে ২০ বছর হত্যা মামলার আসামি

বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজের অবস্থান জানান দিতে তিনজনকে হত্যা করে হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম ওরফে খুনি হেলাল। ওই হত্যাকাণ্ডে করা মামলা থেকে নিজেকে আড়াল করতে গত ২০ বছর ধরে বাউল ছদ্মবেশে ঘুরছেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের পর ভৈরব স্টেশনে গান গেয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন এবং দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মূলত হত্যাকাণ্ডের সাজা থেকে বাঁচতেই তার এসব কৌশল।

গত বুধবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছদ্মবেশী বাউল হেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হেলালের বিরুদ্ধে যে তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে, সবই বগুড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। তিনি বগুড়ার একজন সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা, ২০০১ সালে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি তিনি। এছাড়া ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি ছাড়াও ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় করা একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করা হয়??। ২০০০ সালে বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে বামহাতে আঘাত পান তিনি এবং একপর্যায়ে বামহাত পঙ্গু হয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় এসে হাত লুলা হেলাল নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি।’

গ্রেপ্তার হেলালকে সিরিয়াল কিলার হিসেবে ব্যাখ্যা দেওয়ার কারণ সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, তার বক্তব্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তিনটি হত্যা মামলায় তিনি জড়িত। ২০০৯ সালের পর ঘটা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য আমরা সহজেই পেয়ে যাই। কিন্তু এর আগের তথ্য থানা থেকে সংগ্রহ করতে হয়। আমরা যখন তাকে থানা পুলিশে হস্তান্তর করব, তখন থানা পুলিশও এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে। পরে তারাও আরো কোনো মামলার সংশ্লিষ্টতা পেতে পারে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছদ্মবেশী বাউল হেলাল র‌্যাবকে জানান, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে এলাকায় মুদির দোকান করতেন তিনি। পরে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। চুরির মামলায় ২০১৫ সালে যখন জামিন পায়, তখন তিনি কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম চলে যান। সেখানে কয়েকদিন অবস্থানের পর সিলেটে ছদ্মবেশ ধারণ করে কিছুদিন অবস্থান করেন। বিভিন্ন সময় তিনি তার নামণ্ডপরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করতেন। তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফেরারিভাবে জীবনযাপন করেন এবং গত চার বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন নারীর সঙ্গে সংসার করে আসছেন। রেলস্টেশনে বাউল গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

মিউজিক ভিডিওর মডেল হলো যেভাবে : প্রায় ৫ বছর আগে কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশ একটি গানের শুটিং করছিলেন নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে। শুটিং চলার সময় রেললাইনের পাশ দিয়ে একজন বাউল যাচ্ছিল। তখন শুটিংয়ের পরিচালক তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। হেলাল মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ‘ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল’ শিরোনামে গানের মডেল হিসেবে পরে তাকে দেখা যায়। ইউটিউবে গানটির ভিডিওচিত্র ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বিপুলসংখ্যক দর্শক এই গানটি ইউটিউবে দেখেন। ৪৬ মিলিয়ন ভিউ হয় গানটির।

এই গানটি যখন প্রচার হয় বগুড়ার বিভিন্ন লোকজন দেখে। পরে এলাকাবাসী আমাদের জানায়, তিনি বগুড়ায় বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ছয় মাসের চেষ্টায় তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close