বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ১১ জানুয়ারি, ২০২২

চোরাচালানিতে শক্তিশালী সিন্ডিকেট

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানির ট্রাকে পাচার হচ্ছে পণ্য

আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে চোরাচালানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে একশ্রেণির অসাধু চক্র পণ্য পাচার করে। দুই পাড়ের দুটি সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত বলে জানা গেছে।

ভারত থেকে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে নিয়ে আসে টাকা, পাসপোর্ট, শাড়ি, থ্রি-পিস, ওষুধ, কসমেটিকস, গাঁজা, ফেনসিডিল, মদ, অস্ত্রসহ নানা ধরনের পণ্য। আবার বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকে যাচ্ছে স্বর্ণ, ডলারসহ বিভিন্ন পণ্য। এসব পণ্য পাচারের চালান বেনাপোল ও পেট্রাপোলে অনেকবার আটক হওয়ার পরও পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। আটক হয় ট্রাকচালক ও হেলপাররা। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার চার কেজি স্বর্ণসহ ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বিএসএফের হাতে আটক হয়েছে ট্রাকসহ বাচ্চু নামের এক বেনাপোলের ট্রাকচালক। ঢাকা মেট্রো-ট-১১-২০৩৩ নম্বর গাড়ির মালিক শওকত মিয়া বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে নাছির গ্লাস নিয়ে বেনাপোল এসে বদলি চালক বাচ্চু খানের কাছে ভারত প্রবেশের জন্য ট্রাক হস্তান্তর করি। আমরা ঢাকা থেকে বেনাপোল এলে এখানকার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা আমাদের সরাসরি ভারতে প্রবেশ করতে দেন না। তারা আমাদের কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে ইউনিয়নের স্থানীয় লোকদের মারফত ভারতে গাড়ি পাঠান। আমার পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে ভারত প্রবেশের পর খবর পাই বদলি চালক বাচ্চু খান চার কেজি স্বর্ণ নিয়ে আটক হয়েছে সে দেশের বিএসএফের হাতে। আমি গাড়ির অপেক্ষায় আজ ছয় দিন বেনাপোল বন্দরে অপেক্ষা করছি।’

একই ধরনের অভিযোগ করেন খুলনার ট্রাকচালক রতন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা বেনাপোল এলে একটি চক্র আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে এখানকার চালকদের দিয়ে ভারতে গাড়ি পাঠায়। আর এসব চালক এখান থেকে হুন্ডির টাকা ও স্বর্ণ পাচারে জড়িত হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে এমন কয়েকটি চালান আটক হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের হাতে। এর আগেও কয়েকটি স্বর্ণের চালানসহ আটক হয় এ রকম বদলি চালকরা।’

স্থানীয় কাদের আলী বলেন, বাংলাদেশি চালকরা শুধু স্বর্ণ-ডলার পাচার করে না। ভারতীয় ট্রাকচালকরা আমদানি পণ্যের সঙ্গে নিয়ে আসে ভারত থেকে শাড়ি, থ্রি-পিস, ফেনসিডিল, মদ, ওষুধ, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ নানা ধরনের পণ্য। মাঝেমধ্যে কাস্টমস, পুলিশ, বিজিবি সদস্যদের কাছে বেনাপোল বন্দর এলাকা থেকে কিছু চালান আটক হলেও বড় বড় অংশ চলে যায় দেশের অভ্যন্তরে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ব্যক্তি বলেন, বেনাপোল বন্দর এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চক্র। এরা বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নিয়ে আসে ভারত থেকে অবৈধ পণ্য। বিভিন্ন শেডে আনলোড করে অথবা ট্রাক টার্মিনাল বা কাঁচামালের ইয়ার্ডে নামিয়ে বন্দরের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশে বের করে এসব পণ্য। এভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয় ওই চক্রটি। এভাবে আমদানি পণ্যের সঙ্গে চোরাচালানি পণ্য এনে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে এই এলাকার কিছু অসাধু চক্র। এর মধ্যে অনেকেই সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসার নাম করে এসব কাজ করে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন লোকের লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে এ কাজ করে থাকে।

সম্প্রতি ক্যাপসিকামের চালানের মধ্যে প্রায় কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে শাড়ি, থ্রি-পিস, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, শিষাজাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে বন্দরের কাঁচামালের ইয়ার্ডে। পরে তা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল বন্দরের আনসারের প্লাটুন কমান্ডার আবুল কালাম বলেন, ‘আমার দায়িত্বকালে এ পর্যন্ত বন্দর এলাকায় যত অবৈধ পণ্য অথবা অবৈধভাবে কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি, তাকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেছি। কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘কাস্টমস, বন্দর মিলে যৌথভাবে সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে নজর রাখা হয়। এরই মধ্যে অনেক অবৈধ পণ্য চালান আটক করা হয়েছে। কিছু ট্রাকচালক তাদের কেবিনের মধ্যে এসব পণ্য নিয়ে আসে। ভারতে যেসব ট্রাক পণ্য নিয়ে যায় সেগুলো চেকপোস্টে বিজিবি-কাস্টমস যৌথভাবে তল্লাশি করে থাকে। তবে চালক যদি তার ট্রাকের মধ্যে কোনো জিনিস লুকিয়ে নিয়ে যায় সেটা ধরা অসম্ভব। তার পরও আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close