নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ জানুয়ারি, ২০২২

আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ

প্রতারণার ফাঁদে ই-কমার্স

প্রতারণা ও প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে দ্রুত বাড়তে থাকা ই-কমার্স খাত গত বছরে বেশ ধাক্কা খেয়েছে। বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন হাজারো গ্রাহক। ফলে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও পলাতক একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সিইও। ৩০টির বেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে লোপাট করেছে তিন হাজার কোটিরও বেশি টাকা। এ পরিস্থিতিতে এই খাতে নতুন বিনিয়োগও আসছে। তবে নতুন উদ্যোক্তারা এ খাতে কতটা আস্থা ফেরাতে পারবেন সেটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ তদারকি প্রতিষ্ঠানে ব্যর্থতায় ই-কমার্স খাতে অনিয়ম হয়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংস্থাগুলোর সক্ষমতা না বাড়ালে এমন ঘটনা আরো ঘটবে। তাই সম্ভাবনাময় এ খাতটির ভবিষ্যৎ বিবেচনায় তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। গত কয়েক মাসে ওয়ালকার্ট, ই-বাংলাদেশ, দুর্বারডট লাইভ, বাংলা মার্ট, লেটসগো মার্টসহ ডজনখানেক নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। চালুর অপেক্ষায় আছে আরো নতুন কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারছেন না নতুন উদ্যোক্তরা। কেননা এ খাতে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে তা সহসাই ঠিক হবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাশ অন ডেলিভারি বা পণ্য পাওয়া মাত্রই টাকা পরিশোধে ঝুঁকছেন নতুন উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সের বড় সম্ভাবনা আছে। কিছু বিছিন্ন ঘটনায় প্রভাব পড়লেও শিগগির আগের ধারায় ফিরবে এই খাত।

ই-কমার্স খাতের অভিভাবক সংগঠন ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে আড়াই হাজারের বেশি ই-কমার্স সাইট আছে। এ ছাড়া ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসা বা এফ-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন প্রায় দুই লাখ উদ্যোক্তা। সম্মিলিতভাবে এই দুই খাতের পরিধি প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা।

ই-ক্যাব সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জামা-কাপড়, কসমেটিক্সসহ ফ্যাশন আইটেমের বিকাশ দ্রুত ঘটছে ই-কমার্সে। বর্তমানে এসব পণ্যের সাত হাজার কোটি টাকার বাজার আছে। এ ছাড়া মুদিপণ্য, ইলেকট্রনিক্স, রেডিমেড খাবারের বাজারের প্রসারও দ্রুত বাড়ছে। এ অবস্থায় কিছু প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালিপনায় তৈরি হয়েছে আস্থার সংকট। বাজার ঠিক হতে আরো ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, ই-কমার্সে আটকে থাকা টাকা ফেরত ও প্রতারণাহীন সেবা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেবে না এই খাত।

নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দুর্বারডট লাইভের হেড অব বিজনেস এস এম তাহসিন রহমান বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষ এখন কিছুটা ই-কমার্সবিমুখ হয়ে পড়েছে। আমরা মানুষের আস্থা ফেরাতে কাজ করছি। গ্রাহকদের ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য কেনার সুবিধা দিচ্ছি। আমরা চাচ্ছি গ্রাহকদের দ্রুত ই-কমার্সে ফেরাতে। গত বছরের নভেম্বরে আত্মপ্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতাদের ই-কমার্স সেবা দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে বিপুলসংখ্যক পণ্যের সমাহার নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা। তাহসিন রহমান বলেন, ওমিক্রন যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে ফের যদি লকডাউনের মতো পরিস্থিতি হয় তাহলে গ্রাহক ই-কমার্সমুখী হবেন। আমার মনে হয়, ই-কমার্স খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ আছে। এজন্য আমরা গ্রোসারি আইটেম নিয়েও কাজ করছি।

ই-বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুশান্ত দাসগুপ্ত বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স খাতকে নষ্ট করে দিল তারা আসলে প্রকৃত মার্কেটপ্লেস ছিল না। কোনো ই-কমার্স মাসের পর মাস পণ্য আটকে রেখে ব্যবসা করে না। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে বাজারে অনেক বড় প্রভাব পড়েছে। মানুষ এখন ই-কমার্সকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অর্ডার দেওয়ার আগে তারা ভাবেন, পণ্যটা আদৌ পাব কি না। এ অবস্থায় ক্যাশ অন ডেলিভারি দিয়ে আস্থার সংকট কাটানোর চেষ্টা করছি। অন্য দিকে ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন মনে করেন, দ্রুতই দেশের ই-কমার্স খাত ঘুরে দাঁড়াবে। সংকট সব খাতেই আছে। ই-কমার্স ভাইব্রান্ট একটা ইন্ডাস্ট্রি। এখানে উদ্যোক্তা হিসেবে অনেক তরুণ জড়িত থাকায় আমরা সমস্যাটা বেশি ফেস করেছি। ই-কমার্সের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করছে ই-ক্যাব। ই-কমার্সে আটকে থাকা টাকা ফেরত পেলে গ্রাহকের আস্থা আবার ফিরবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে সিস্টেম ডেভেলপ করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close