প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
নিষেধাজ্ঞার পর এবার পর্যাপ্ত ইলিশের আশা
মা ইলিশ সংরক্ষণের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদকাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে ও নদীতে মাছ ধরতে গেছেন জেলেরা। তারা আশা করছেন, এবার ভালো মাছ পাবেন। ভরা মৌসুমে মাছ না পেয়ে যে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, এবার তা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা তাদের। উপকূলের ও পদ্মার দুই এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট :
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) : সাগরে নেমেছে কুয়াকাটাসহ মহিপুর, আলিপুর উপকূলের জেলেরা। এবার ইলিশ শিকার করে ঋণের বোঝা খালি করার স্বপ্ন তাদের।
কুয়াকাটার জেলে দেলোয়ার মোল্লা বলেন, আশা করছি সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ পাব।
দেশের অন্যতম মৎস্যবন্দর আলীপুরের জেলে মনির মাঝি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করি ইলিশ শিকার করে আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব। কুয়াকাটার একাধিক জেলে জানিয়েছেন, এ বছর ইলিশের ভরা মৌসুমে মাছ না পেয়ে তারা দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়লে ধার-দেনা শোধ করা যাবে। কুয়াকাটা পৌর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো. মনির শরীফ বলেন, আমরা জেলেদের সরকারি সহযোগিতা করেছি। পরামর্শ দিয়েছি। কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেরা সহযোগিতা করেছেন। ২২ দিনের অবরোধ সফল হয়েছে।
বরগুনা : তালতলী নিদ্রা সকিনা এলাকার জেলে সালাম মাঝি জানান, ইলিশ শিকারের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আশা করি পর্যাপ্ত মাছ পাব। জেলে নাসির মাঝি প্রতিবেদককে জানান, অবরোধ শেষ হওয়ায় আমরা আনন্দিত। ইলিশ শিকারে সাগরে যাওয়ার জন্য আমাদের ট্রলার নিয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।
আমতলী (বরগুনা) : নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন পর আমতলীর পায়রা নদীতে মাছ ধরা পুরোদমে শুরু হয়েছে। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনাও সরগরম হয়ে উঠেছে। তবে প্রতিটি মা মাছে ডিম রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জাল ফেলা ও মাছ শিকারে নদীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। তবে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা অফিস।
জেলে ইউনুস, হালিম, সোহেলসহ অনেকেই এ প্রতিবেদককে জানান, ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে নেমেছেন। আগের তুলনায় জালেও ধরা পড়ছে ইলিশ। দামও অনেক ভালো। জেলেদের দাবি, যথাসময় অভিযান না দেওয়ায় মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারেনি। এ কারণে মাছে ডিম রয়েছে।
এদিকে উপজেলা মৎস্য অফিসার হালিমার সরদার জানান, গত বছর শীতে প্রচুর মাছ পাওয়া গেছে। এবারও মাছ আরো বেশি ধরা পড়বে বলে আশা করেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ : টানা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ উপেক্ষা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক জেলে ইলিশ শিকারে তৎপর ছিলেন। মুন্সীগঞ্জের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার করতেন তারা। অসাধু জেলেরা রীতিমতো মা ইলিশের হাট বসত।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালের দিকে তেউটিয়া গ্রামের জেলে পরিমল দাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, প্রকৃত জেলেরা কখনো মা ইলিশ শিকারে যাইনি। এটা মৌসুমি জেলেদের কাজ। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও মৎস্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে ৩৫৫টি মামলা হয়েছে। আটক হয়েছেন ২২৭ জন। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর : গতকাল থেকে নদ-নদীতে ইলিশ ধরা ও মৎস্য আড়তে, হাটবাজারে ইলিশ বিক্রি ও পরিবহন আবার শুরু হয়েছে। চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার পদ্মা-মেঘনা নদীতীরবর্তী এলাকার জেলেরা ইলিশ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ব্যস্ততা বেড়েছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিস জানিয়েছে, অভিযান চলাকালীন ২২ দিনে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলার বিভিন্ন মাছ ঘাট, মাছের আড়ত, বাজারসহ নদীতে অভিযান চালিয়ে ১০৯.২৭৯ দৈর্ঘ্য (লাখ মি.) জাল আটক করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি। আটক করেন ১.১৪৪৫০ টন ইলিশ। আটক করা হয় ২১৮ জন জেলে। ২২ দিনের অভিযানে ১০৮টি মামলাসহ ৯৭টি মোবাইল কোর্ট ও ২৮৮টি অভিযান পরিচালিত হয়।
মাছ ধরাবস্থায় চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের জেলে হানিফ গাজী, কালু খাঁ, আবদুল আজিজ ও মামুন খাঁ বলেন, সরকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে আমরা আর নদীতে নামিনি। বাইরের জেলেরা চাঁদপুরের সীমানায় এসে ইলিশ ধরেছেন। নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরতে না পেরে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করেছি।
খুলনা : নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করায় খুলনায় ৪৯টি মামলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা ও ১ জনকে কারাদ- দেওয়া হয়। খুলনা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৫১টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩৩৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট এবং ৪৯টি মামলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ছাড়া ১ জন জেলেকে আটক করে কারাদ- প্রদান এবং ৭ হাজার ৫০ টন ইলিশ জব্দ করা হয়।
"