reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ অক্টোবর, ২০২১

মেয়রের উন্নয়ন ভাবনা

জল-সবুজের শহর হবে মেহেরপুর

মেহেরপুর পৌর এলাকা হবে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শহর। ময়লা-আবর্জনা সড়কে পড়ে থাকবে না। প্রতিটি বাড়ি গিয়ে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হবে। গড় পুকুরকে ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। সেখানে থাকবে সিনিয়র সিটিজেন এরিয়া, ওয়াকিং জোন, চাইল্ড সুইমিং, কফিশপ, অত্যাধুনিক ফোয়ারা, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এছাড়া শহর যানজটমুক্ত করতে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস টার্মিনাল গড়া হয়েছে। এবার হবে ট্রাক ট্রার্মিনাল। এই পৌরসভা আমার একার না, এলাকার সবার। প্রতিনিয়ত জনগণের কল্যাণে তাদের সুখে দুঃখে পাশে দাঁড়ানো, গরিব, দুস্থ, অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমার প্রধান লক্ষ্য। প্রতিদিনের সংবাদকে এমন প্রত্যাশার কথা বলেছেন মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেরপুর প্রতিনিধি দিলরুবা খাতুন।

স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত মেহেরপুর পৌরসভা। একটি খড়ের ঘরে কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ১৮৬৯ সালের ১৫ এপ্রিল পৌরসভার যাত্রা শুরু। সেই সময় জনসংখ্যা ছিল ১৫ হাজারের নিচে। কালক্রমে সেই খড়ের ঘর এখন আলিশান আধুনিক ভবন। পৌরসভাটি ১৯৯১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং ২০০১ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ১৫ দশমিক ১৩ বর্গকিলোমিটারের পৌরসভাটির বর্তমানে জনসংখ্যা ৭০ হাজার। আর ভোটার ৩০ হাজার ৯৬৫। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিলে পৌরসভার ১৫০ বছরপূর্তি উদযাপিত হয়েছে।

মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন দেশের মেয়রদের মধ্যে বয়সে কনিষ্ঠ। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ২০১৭ সালে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। এ সময়কালে তিনি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। কিন্তু এখনো পৌর এলাকায় রয়ে গেছে অনেক সমস্যা। পানি সরবরাহের অবস্থা করুণ। রাস্তাঘাটের অবস্থাও বেহাল। সর্বাদাই শহরে যানজট লেগে থাকে। পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো উন্মুক্ত হওয়ার কারণে মাঝে মধ্যেই সেখানে লোকজন পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। পৌরবাসীর বিনোদনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। শিশুদের জন্য খেলার মাঠ কিংবা পার্ক নেই। মাদক বিক্রি, যৌন হয়রানির মতো অপরাধ বন্ধ হয়নি।

মেয়র রিটন বলেন, টেকসই উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি হিসেবে রাস্তা, ড্রেন, পরিকল্পিত নগর এবং মাদকমুক্ত পৌরসভা গড়ার কথা ছিল। এসব প্রতিশ্রুতির অনেকটাই বাস্তবায়ন করেছি। পৌর উন্নয়নে নিজেদের লোকবলের বাঁকা দৃষ্টির কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পৌরসভার পানি সরবরাহে যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধানে সাড়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে।

রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা কাটিয়ে উঠেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, আগের মেয়রের রেখে যাওয়া ১৫ কোটি টাকার দেনা পৌরসভাকে পরিশোধ করতে হয়েছে। এ কারণে থমকে গিয়েছিল উন্নয়নমূলক কাজ। অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণকাজ চলছে। বস্তি উন্নয়নে ৫ কোটি টাকার কাজ চালু হয়েছে। পৌর কর্মচারীদের বেশ কয়েক মাসের বেতন বাকি ছিল। কিছু বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছি।’ বর্তমানে ৩০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।

মেয়র বলেন, ‘পৌরবাসীর সেবা করাই আমার কাজ। বর্তমানে এডিস মশা মারতে পৌর কর্মচারীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি ড্রেনে প্রতিদিনই ওষুধ ছিটাতে হচ্ছে। নতুনভাবে প্রতিদিন হাসপাতাল ও তার আশপাশে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পাশাপাশি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে।

রিটন বলেন, ‘৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে অতি আধুনিক একটি পিলখানা নির্মাণ করেছি। যা দেখার জন্য প্রতি দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন। ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ নির্মিত হয়েছে। ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে কম্পোস্ট প্লান্ট হবে। প্লান্টের মাধ্যমে বর্জ্য থেকে উৎপাদন হবে জৈবসার। এছাড়া বর্জ্যরে বায়োগ্যাস থেকে পৌর এলাকায় স্ট্রিট লাইট জ্বালানো হবে। এতে মাসে ৫০ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হবে।’

ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ পাইয়ে দেওয়াসহ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে মেয়র বলেন, এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। পৌরসভা দুর্নীতিমুক্ত। দুর্নীতি বন্ধে জিহাদ ষোষণা করেই পৌরবাসী আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। কোনো কর্মচারী ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভিন্ন সময়ে একটি মহলের এমন অভিযোগে বিভিন্ন মহল তদন্ত করে অভিযোগকারীদের ধিক্কার দিয়েছে তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান।

পৌরসভার বেদখল হওয়া জায়গা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, তাহের ক্লিনিকের পাশ দিয়ে ময়ামারি সড়কের রাস্তার পাশের জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। ওয়াপদা সড়কের জায়গা দখলমুক্ত করতে আদালতে মামলা আছে। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।

সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, যৌন হয়রানি প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, শুধু পৌরসভার পক্ষে একা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয়। এজন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যৌন হয়রানি বন্ধে প্যানেল মেয়র শাহীনুর রহমান রিটনের নেতৃত্বে পৌরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্কুল-কলেজ পর্যায়ে এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনসচেতনতায় কাজ করছেন।

পৌরসভা নিয়ে নিজের আগামী পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মেয়র রিটন বলেন, পৌরসভার আয় বৃদ্ধির জন্য নিজস্ব ভূমিতে মার্কেট, ফ্ল্যাটবাড়ি, পার্ক নির্মাণ করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করব। এছাড়া হতদরিদ্র পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য স্বল্প ব্যয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

আগামীকাল পড়ুন

চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের কথা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close