নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

সাত দফা দাবিতে শাহবাগে অবরোধ

দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দিরসহ হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন থেকে সাত দফা দাবি জানিয়ে বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়ে দুপুরের পর তারা সড়ক ছেড়ে দেন। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শাহবাগ মোড়ের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে এতে শিক্ষকরাও সংহতি জানান।

এদিকে, অবরোধের কারণে শাহবাগ, পল্টন, সায়েন্সল্যাব, বাংলামোটরসহ আশপাশের এলাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুপুর বেলা ২টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো- হামলার শিকার মন্দিরগুলোর শিগগিরই প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার পরিবারগুলোকে স্থায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলার দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে আধুনিকায়ন করে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা এবং জাতীয় বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জিডিপির ১৫ শতাংশ বরাদ্দ করা। বিক্ষোভে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছরই শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। কিন্তু এবার আগের সব হিসাব ছাড়িয়ে গেছে। এই আক্রমণ সাময়িক নয়, এই ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। এটি পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ।

বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের সমণ্ডঅধিকার দাবি জানান ঢাবির জগন্নাথ হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার। তিনি বলেন, এই বিপদের সময় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিষধর সাপের মতো। তাদের অপতৎপরতা সমূলে উৎপাটন করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাত দফা দাবি তুলে ধরে জগন্নাথ হলের ছাত্র ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়জিৎ দত্ত বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দাবিগুলোর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানা হলে এবং এরমধ্যে দেশের কোথাও এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেব।’

জয়জিৎ দত্ত আরো বলেন, ‘আশা করেছিলাম আমাদের সাত দফা দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে কোনো একটা আশ্বাস আসবে। কিন্তু সে রকম কোনো আশ্বাস আমরা পাইনি। ইসকন বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে আশাবাদী।’

এর আগে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ শুরু হওয়ার পর সেখানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা, সাবেক প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার ও আইন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল।

দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যোগ দেয় ইসকন বাংলাদেশ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপদ চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী এতে বক্তব্য দেন। সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

আন্দোলনে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুনে ‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘৪৬-এর চেতনায়, বাংলাদেশ চলবে না’’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘আমার ভাইয়ের খুনি কে, ফাঁসি দাও দিতে হবে’, ‘জঙ্গিবাদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’- এমন নানা সেøাগান দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close