reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

ময়রের উন্নয়ন ভাবনা

উন্নয়নযাত্রায় থাকব এগিয়ে

আধুনিক নাগরিক সুবিধা, উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও পরিকল্পিত নগর অবকাঠামো, ডিজিটাল পৌরসভা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়ী হয়েছি বিশাল ভোটের ব্যবধানে। নির্বাচনের পরই পৌরসভার উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি; যা জেলার অন্য পৌরসভার তুলনায় অনেক বেশি। এখন উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে পৌরবাসী। প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। আরো ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে আছে। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে, অতীতে কোনো মেয়রের আমলে তা হয়নি। তাই পৌরবাসী খুশি। আমার প্রত্যাশা উন্নয়নযাত্রায় এগিয়ে থাকার। প্রতিদিনের সংবাদকে এমন আশার কথা শুনিয়েছেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি আবদুল কাইয়ূম।

সুনামগঞ্জ পৌরসভা ১৯১৯ সালে স্থাপিত হয়। আয়তন ২২.১৭ বর্গকিলোমিটার। বসবাস প্রায় ৮৭ হাজার ৫৭০ জন মানুষের। শহরটির গা-ঘেঁষে সুরমা নদী প্রবাহিত হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ শহরটিকে প্রাণবন্ত করে রেখেছে। এই শহরে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অনেক গুণিজনের জন্ম। অতীত-ঐতিহ্য সুনামগঞ্জের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছে। প্রতিদিন নানামুখী নাগরিক সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করছেন পৌর মেয়র নাদের বখত। এর মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনই তার প্রধান চ্যালেঞ্জ। তিনি এবার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। প্রথমবার উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল। দ্বিতীয়বার গণরায়ে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি।

পৌর মেয়র নাদের বখত এই প্রতিবেদককে বলেন, পৌরসভার ভেতরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। এ কাজগুলো শেষ হলে শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ পৌর নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন হবে। এ কাজগুলোর মধ্যে প্রধান হলো রাস্তা এবং ড্রেন সংস্কার ও নির্মাণ। ৯টি ওয়ার্ডে সুষম বণ্টনের মাধ্যমে উন্নয়নকাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বললেন, ‘আমার পৌরসভার অনেক এলাকায় এখনো গ্রাম রয়েছে। সেখানে বেকার যুবকদের নিয়ে কাজ করতে সুবিধা হবে। কারণ সেসব এলাকায় বেকারদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাই। বিশেষ করে হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য খামার করতে চাই তরুণদের দিয়ে। এগুলোর মাধ্যমে তারা আত্মনির্ভশীলতার পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারবে। বিনোদনের জন্য একটি পার্ক করা হবে। পার্কের জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র। সেখানে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন একটি পার্ক নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া একটি সুন্দর সুইমিংপুলও নির্মাণ করা হবে। সেখানে পৌর নাগরিকরা চাইলেই অবকাশ-যাপন করতে পারবেন। এখন সব উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় শহরের মাঝখানে। এটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেগুলো এক জায়গায় না করে একটি হবে পৌরসভার শেষ সীমানা ৯ নম্বর ওয়ার্ডে, পৌরসভার আরেক অংশ ১ নম্বর ওয়ার্ডে হবে আরেকটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। অন্য দুটি ৩ নম্বর ওয়ার্ড ও মধ্য শহর বড়পাড়ায় একটি করে হবে।’

মেয়র বলেন, আমার দুটি মার্কেট রয়েছে। একটি পৌর মার্কেট। এ মার্কেটটি এরই মধ্যে বুয়েটের গবেষক দল ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এটিকে একটি আধুনিক মার্কেটে রূপান্তরিত করা হবে। পুরোনো পৌর কলেজের জায়গায় একটি দৃষ্টিনন্দন কমিউনিটি সেন্টার করা হবে। সেখানে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষজন উচ্চবিত্তের মতো বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো করতে পারবে। এছাড়া নাগরিকদের চলাচলের জন্য মিনিবাসের ব্যবস্থা করা হবে। ২০ সিটের বাস চলবে পৌরসভার ভেতরে। সর্বনিম্ন দুটি পৌর অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। এ অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে কম খরচে পৌরসভার নাগরিকসহ আশপাশের মানুষজন সেবা পাবেন।

মেয়র নাদের বখত জানান, রাস্তাঘাট পাকাকরণ, হাছন রাজার বাড়ির পাশের রাস্তা প্রশস্তকরণসহ রেলিং দিয়ে ফুটপাতের ব্যবস্থা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার বক্তের স্মরণে রাস্তা নির্মাণ, কেন্দ্রীয় কবরস্থানে গেট নির্মাণ, সড়কে বাতি স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে আইইউআইডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় ১৭টি প্যাকেজে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার, ড্রেন নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেন সংস্কারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে তেঘরিয়া মোড়ল হাটি রাস্তা সংস্কার, মোহাম্মদপুর প্রধান সড়ক সংস্কার, আফতাবনগর রাস্তা সংস্কার, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ রাস্তা উন্নয়ন, লঞ্চঘাট রোড ও ফুটপাত উন্নয়ন, সোমপাড়া রাস্তা উন্নয়নসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়ক ও ড্রেন সংস্কার কাজ। অপরদিকে, এসপিআইআইপি প্রকল্পে ২৩টি প্যাকেজে প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক উন্নয়ন, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার, নদীরপাড় সৌন্দর্যবর্ধন, ড্রেন নির্মাণ, বাতি সরবরাহসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পে বিভিন্ন কাজের মধ্যে রয়েছে তেঘরিয়া নদীরপাড় সৌন্দর্যবর্ধন, কেবি মিয়া মক্তব রাস্তাসহ ড্রেন উন্নয়ন, কালীপুর প্রধান রাস্তা সংস্কার, ডিএস রোড সংস্কার, কবি মমিনুল মউজদীন রোড সংস্কার, এলাহী মঞ্জুর সড়ক উন্নয়ন, নতুনপাড়া প্রধান সড়ক উন্নয়ন, ষোলঘর ভিলেজ রোডসহ ড্রেন উন্নয়ন, তেঘরিয়া প্রধান সড়ক সংস্কার, ১ হাজার এলইডি লাইট স্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও রাস্তার উন্নয়ন। এছাড়াও ২৫টি প্যাকেজে প্রায় ২০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজের টেন্ডার হয়েছে এবং কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত জানান, করোনা ও বর্ষায় বৃষ্টি-বাদলের কারণে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হয়েছে। তবে আবারও পুরোদমে উন্নয়নকাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই শহরবাসী একটি পরিপাটি দৃষ্টিনন্দন শহর পাবেন। সরকারপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সুনামগঞ্জের কৃতীসন্তান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুনামগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়নে বৃহৎ পরিমাণ অর্থের জোগান দেওয়া হয়েছে। ৫০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। আরো ২০ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। সিলেট বিভাগীয় পৌরসভার আওতায় আরো ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করছি।

মেয়র আরো বলেন, শহরের কোনো রাস্তার উন্নয়নকাজ বাকি থাকবে না। ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান হবে। শহরবাসীর জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। পৌরসভার সৌন্দর্যবর্ধনে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নযাত্রায় সুনামগঞ্জ পৌরসভা এগিয়ে থাকবে।

আগামীকাল পড়ুন

মেহেরপুর পৌর মেয়রের কথা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close