reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ অক্টোবর, ২০২১

খুলনা হবে স্বাস্থ্যকর শহর

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন জলাবদ্ধতামুক্ত আধুনিক পরিচ্ছন্ন নগর গড়ার। ৩১ দফা ইশতেহারে ছিল জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, দুর্নীতিমুক্ত নগর ভবন, সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ, হোল্ডিং ট্যাস্ক না বাড়িয়ে সেবার মান বৃদ্ধি, মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা, সিটি সেন্টার গড়ে তোলা এবং বিনামূল্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি। মেয়র নির্বাচিত হয়ে তালুকদার আবদুল খালেক প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন আন্তরিকতার সঙ্গেই। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছর পূর্ণ হয়ে গেল ২৫ সেপ্টেম্বর। এরই মধ্যে বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা বিশে^র খুলনা শহরকে স্বাস্থ্যকর হিসেবে গড়ে তুলতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। ফলে খুলনা হতে যাচ্ছে উন্নয়নশীল বিশে^র স্বাস্থ্যকর শহরের রোল মডেল। এই সময়ে আরো সাফল্য, সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতাসহ নানা দিক নিয়ে মেয়র প্রতিদিনের সংবাদকে বলেছেন নানা কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. শাহ আলম।

১৮৮৪ সালে খুলনা নগরের মর্যাদা পায়। সে সময়ে টুটপাড়া, শেখপাড়া, চারাবাটি, হেলাতলা এবং কয়লাঘাট এলাকায় সমন্বয়ে পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়। একই বছর শহরের শত বর্ষপূর্তিতে মিউনিসিপাল করপোরেশন এবং ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয় খুলনা। এর আয়তন ৪৫.৬৫ বর্গকিলোমিটার এবং বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। বর্তমানে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। ২০১৮ সালের ১৫ মের নির্বাচনে প্রায় ৬৬ হাজার বেশি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন তালুকদার আবদুল খালেক।

মেয়র বলেন, মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার একটি স্বাস্থ্যসেবা। জনগণের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিতে সিটি করপোরেশনের আলাদা বিভাগ কাজ করছে। নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র কেসিসি মনিটরিং করে থাকে। স্বাস্থ্যকর খুলনা গড়তে অনেক কাজ চলছে। সোলার পার্ক, লিনিয়ার পার্ক, খালিশপুর শিশুপার্ক আধুনিকায়ন করা হচ্ছে এবং আরো পার্ক স্থাপন করা হবে। নগরীতে ৩০ পুকুর সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৩৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগ ও অর্থায়নে বিশ্বের ৫টি শহরকে স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই পাঁচটি শহরের মধ্যে একটি খুলনা।

তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে। আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী। তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা করে দিতে পারলে তারা আরো দ্রুত সময়ে সামনে এগিয়ে যাবে। সে লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়েছে।

মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে খুলনা সিটি করপোরেশন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। এজন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা এবং সরকারের সহায়তায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ পেলে জলবায়ু উদ্বাস্তুসহ ক্ষতিগ্রস্তরা প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। এরই মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬০৮ কোটি ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।

তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, সরকারি অর্থায়নে ১২টি প্রকল্পের মধ্যে ছিল শহরের ভৌত অবকাঠামো, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি সরবরাহ কাজে ৪৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের সুবিধাদি, অবকাঠামোগত মেরামত ও পুনর্বাসনে ছিল ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও মেরামত বাবদ ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ৭০ বর্গকিলোমিটার ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুতে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। শলুয়া বাজার ও ডুমুরিয়ায় স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড নির্মাণে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। নগর ভবন, জোনাল অফিস সম্প্রসারণ, ওয়ার্ড অফিস ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ বাবদ ১২ কোটি ১ লাখ টাকা। শহরের সড়কবাতি (এলইডি বাল্ব) প্রতিস্থাপনে ৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। রাস্তা, ফুটপাত সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে ৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। এই ৮টি প্রকল্প ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের দায়িত্ব পালনকালেই বাস্তবায়ন করেছি।

মেয়র বলেন, নির্বাচনের আগে নগরবাসীকে কথা দিয়েছিলাম নির্বাচিত হলে নগরীর অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসন ও সড়কের উন্নয়ন করব। তারই অংশ হিসেবে ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কেসিসির জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ এবং ৬০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন’ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। ২০১৮ সালের ২৭ জুন প্রকল্প দুটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। প্রকল্পটি জমা দেওয়ার মাত্র ৬ দিন পর অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাই কমিটির সভা আহ্বান করা হয়। কেসিসির ইতিহাসে এ দুটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর আগে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল।

মেয়র জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন পাওয়া কেসিসির সড়ক মেরামত প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ৫১৩টি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ৬০টিসহ ৫৭৩টি সড়ক মেরামত করা হবে। আর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদীসহ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি খাল খনন করে পাড় বাঁধাই করা হবে। নগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ৮টি সøুইস গেট পুনর্নির্মাণ করা হবে। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৯টি প্রধান সড়কের দুই পাশে ৬২ কিলোমিটার বড় ড্রেন এবং ১২৮ কিলোমিটার এলাকায় ছোট ড্রেন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদীর ওপর ৩টি সেতু নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।

তালুকদার খালেক আরো বলেন, নগরবাসীর দীর্ঘ দিনের একটা প্রত্যাশা ছিল ময়ূর নদসহ ২৬ খাল অবমুক্ত করা। সেই মহাযজ্ঞ সম্পাদনে অনকটাই এগিয়ে এখন। অনেক অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের এরই মধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আগামীতে কেউ আর যাতে দখল করতে না পারে সেজন্য এলাকা ঘিরে গাছ লাগিয়ে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। খনন করা হবে নদী-খালও। এতে পানি যেমন শহর থেকে দ্রুত বের হবে, তেমন শহর হবে দৃষ্টিনন্দন। ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধ সিটি করপোরেশেন থেকে একটি ভালো উদ্যোগ থাকার কারণে শহরে এই রোগের প্রকোপ হয়নি। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্ধকোটি টাকাও বরাদ্দ মিলেছে। যত দিন বৃষ্টি থাকবে তত দিন এ বিষয়ে কাজ চলবে। আর মশা নিধনে সারা বছরই কাজ থাকবে।

উন্নয়ন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, অর্থ কোনো বিষয় না এজন্য থাকা চাই আন্তরিকতা। আগামী দুই বছরে নগরবাসীকে অভূতপূর্ব সেবা দেওয়া হবে। ইশতেহারের সব কিছুই পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে। এজন্য প্রয়োজন নগরবাসীর সহযোগিতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close