এম মুনতাবির তারিক

  ১২ অক্টোবর, ২০২১

শৌচাগার নয়, যেন ময়লার ভাগাড়

শৌচাগারের অবস্থা বেহাল। পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকলেও দায়িত্ব পালনে তাদের নজর কম। দায়সারা কাজ করে মাসে মাসে বেতন নেন তারা। এমনকি কর্তৃপক্ষেরও শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে নেই নজরদারি। ফলে চিকিৎসা নিতে আসাদের শৌচাগার নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সবার একটাই অভিযোগ, এখানের শৌচাগারগুলো যেন একেকটি ময়লার ভাগাড়। তাছাড়া বেশির ভাগ দরজার অর্ধেক ভাঙা। কেউ শৌচাগারে ঢুকলে অন্য একজনকে বাইরে ‘পাহারা’য় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার কয়েকটির দরজা ভালো থাকলেও ছিটকিনি নষ্ট। কোনোটির কল নষ্ট; সার্বক্ষণিক পড়ে পানি। এমনই দেখা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি গৌরবের সঙ্গে ৮৫ বছর ধরে মানুষের সেবা দিয়ে আসছে। এ হাসপাতালে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারেন ২ হাজার ২০০ জন। কিন্তু সারা দেশের রোগীর চাপ থাকায় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী এখানে প্রতিনিয়ত ভর্তি করাতে হয় কর্তৃপক্ষকে। এসব রোগীর চিকিৎসা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ফলে শৌচাগার ও হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় তাদের নজর থাকে কম। এছাড়াও প্রতিদিন বহির্বিভাগে হাজারের অধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।

তবে রোগী এবং তাদের স্বজনদের মধ্যে বেশিরভাগের অভিযোগ- অনিরাপদ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও শৌচাগার নিয়ে। প্রতিটি শৌচাগারই ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে অস্বাস্থ্যকর শৌচাগারের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে তাদের। অনেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করে এর প্রতিকার চেয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, নতুন এবং পুরাতন ভবন মিলিয়ে রোগীদের ব্যবহারের জন্য এই হাসপাতালে যতগুলো শৌচাগার ও গোসলখানা রয়েছে তার ৮০ শতাংশ ব্যবহারের অনুপযোগী। বহির্বিভাগ ছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডের অধিকাংশ রোগী এবং তার স্বজনদের শৌচাগার নিয়ে রয়েছে এন্তার অভিযোগ। এমনই একজন রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৭ বছরের মেয়েকে নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হন। স্ত্রীসহ ৫ দিন ধরে আছেন তারা। হাসপাতালের অভ্যন্তরের নোংরা পরিবেশ ও অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার ব্যবহারের কারণে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে তিনি ৭ অক্টোবর ডিএমসিএইচ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। গতকাল হাসপাতালের পরিচালক তাকে ডেকে শৌচাগারসহ হাসপাতালের পরিবেশ সুন্দর করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান মিজানুর রহমান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমসিএইচের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বহির্বিভাগে আগে একটামাত্র শৌচাগার ছিল। এখন নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের জন্যেও আলাদা শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। আর যেসব রোগী ওয়ার্ডে ভর্তি থাকেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দুই বা ততোধিক লোক হাসপাতালে অবস্থান করেন। এ কারণে শৌচাগারগুলোয় বাড়তি চাপ থাকে।

মো. নাজমুল হক বলেন, হাসপাতালে যে পরিমাণ চিকিৎসা দেওয়ার কথা তার দ্বিগুণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়। একজন রোগীর সঙ্গে একজন সহকারী থাকার কথা থাকলেও একের অধিক লোক থাকেন। কিন্তু শৌচাগারের সংখ্যা তো বাড়ানো যায়নি। বাড়তি এই চাপের কারণে কিছু অব্যবস্থাপনা থাকতে পারে। এছাড়া যারা প্রান্তিক এলাকা থেকে সেবা নিতে আসেন, তাদের অনেকেই ওয়াশরুমের সঠিক ব্যবহার জানেন না। এ কারণে শৌচাগারগুলো একটু নাজুক অবস্থায় থাকে।

অনেক শৌচাগারের দরজা ভাঙা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোনো সময় হাসপাতালের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন এবং নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তাই আপাতত পুরাতন ভবনে নতুন কোনো কাজ শুরু করা হবে না, যা নতুন হাসপাতালের কাজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়।

হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, হাসপাতাল শুরুতে ৫০০ শয্যার ছিল। বর্তমানে রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় ৪ হাজার। কিন্তু রোগীর সংখ্যানুপাতে শৌচাগার বাড়েনি। বাড়ানো হয়নি পরিচ্ছন্নতাকর্মীও। তাই সীমিত কর্মী দিয়েই পরিষ্কার করা হয়। তবে রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় অস্থায়ীভাবে ৫০০ পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এদের দৈনিক ভাতা দিতে হয় ৬৫০ টাকা। এরাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। কিন্তু বাড়তি রোগীর চাপ থাকায় সবসময় শৌচাগারগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হয় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close