নিজস্ব প্রতিবেদক
ইউপি নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নারীকে হত্যা
বাগেরহাটের মোংলা থানার চিলা ইউনিয়ন
বাগেরহাটের মোংলা থানার চিলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী বিল্লাল সরদারকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরাতে হত্যার পরিকল্পনা করেন আরেক প্রার্থী হালিম হাওলাদার। তিনি পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাড়াটে খুনি জামালকে দিয়ে কাপড়ের খুদে ব্যবসায়ী পারুল বেগমকে হত্যা করিয়েছেন। যদিও পারুলের সঙ্গে সরাসরি পরিচয়ই ছিল না পরিকল্পনাকারী হালিম হাওলাদারের। ভাড়াটে খুনিও জানতেন না কাকে খুন করতে হবে। নির্বাচনী মাঠে এক প্রার্থীর কুটিল চিন্তার শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হলো নিরপরাধ পারুল বেগমকে। এসব তথ্য জানা গেছে পুলিশের পিবিআই সূত্রে। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার সাভারের বক্তারপুর নামাবাজার এলাকায় একটি ভাড়া করা বাসায় পরিকল্পনা মতে পারুল বেগমকে ভাড়াটে খুনি জামাল হাওলাদার হত্যা করে। পরে লাশের পাশে বিল্লাল সরদারের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ফেলে রেখে যায়। নিহত পারুলের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী সিন্দুর কোটা মটমোড়া এলাকায়।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বেরিয়ে আসে ঘটনার পেছনের ঘটনা।
গতকাল সোমবার দুপুরে ধানমণ্ডির পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এটি একটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড হওয়ায় পিবিআই ঢাকা জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্ত অধিগ্রহণ করে। মামলাটি তদন্তকালে এনআইডি কার্ডের সূত্র ধরে মামলার ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মূল ঘাতক মো. জামাল হাওলাদার ওরফে সামাদুজ্জামানকে (৫০) গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে ও পরদিন হত্যা পরিকল্পনার সহযোগী দরজি মাস্টার মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজকে (৪৬) মিরপুর দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। সর্বশেষ গত রবিবার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হালিম হাওলাদারকে (৫২) বাগেরহাটের মোংলা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি হালিম হাওলাদারের বাড়ি বাগেরহাট মোংলার পশ্চিম মচিলা। তার বাবার নাম হামিদ হাওলাদার। তিনি মোংলা থানার ৬ নম্বর চিলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী বিল্লাল সরদারকে একটি হত্যাকাণ্ডে ঘটিয়ে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের আনুমানিক ২০ দিন আগে হালিম মেম্বার ঘাতক জামালের সঙ্গে মোংলায় দেখা করেন। ৩০ হাজার টাকায় একটি লাশ ফেলার চুক্তি হয়। অগ্রিম দেওয়া হয় ৫ হাজার। শর্ত থাকে যে, প্রতিপক্ষ মেম্বার প্রার্থী বিল্লাল সরদারের এনআইডির ফটোকপি ফেলে যেতে হবে হত্যাকাণ্ডের স্থানে। সেজন্য হালিম নিজেই বিল্লালের এনআইডি কপি সংগ্রহ করে ভাড়াটে খুনি জামালের হাতে দেন।
ঘাতক জামাল তার বন্ধু দরজি মাস্টার মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কথামতো পূর্বপরিচিত ও কথিত বান্ধবী পারুল বেগমকে টার্গেট করে জামাল। পারুল বেগম বাচ্চাদের জামাকাপড় তৈরি করে নিজেই ফেরি করে বিক্রি করতেন। ঘাতক জামাল পারুল বেগমের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাভারের বক্তারপুরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসাভাড়া নিতে প্রলুব্ধ করে।
পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার আরো বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাভারের বক্তারপুর নামাবাজার এলাকায় একটি বাসাভাড়ায় ওঠে। পরিকল্পনা মতে, ওই রাতেই পারুল বেগমকে ভাড়াটে খুনি জামাল হাওলাদার গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে। পরে লাশের পাশে বিল্লাল সরদারের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ফেলে রেখে যায়।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, তদন্ত দল জানতে পারে এ হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে হালিম হাওলাদারের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির খুব ঘন ঘন যোগাযোগ হয়। ওই ব্যক্তির ব্যাপারে অনুসন্ধান করে ঘাতক জামাল হাওলাদার ওরফে সামাদুজ্জামানের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার জামালের ছবি সাভারে ভাড়া বাসার কেয়ারটেকারকে দেখালে তিনি জামালকে শনাক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, জামাল জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং এ পরিকল্পনায় জড়িত হালিম মেম্বারসহ সবার নাম প্রকাশ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গ্রেপ্তার অন্য সহযোগী পরিকল্পনাকারী দরজি মাস্টার মিলন কবিরাজও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, খুনি জানত না কাকে খুন করতে হবে। খুনের শিকার নারী জানতেন না কেন তাকে খুন করা হলো। শুধু প্রভাব বিস্তার, ইউপি নির্বাচনে জেতার জন্য পারুলকে খুনের শিকার হতে হলো। তিনি বলেন, এখানে একটা বিষয় খুবই স্পষ্ট, খুনির পরিকল্পনা ছিল এমন একজনকে খুন করা, যে হবে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাতে খুনের তদন্ত হলে বিল্লাল সরদার ফেঁসে যায়। সে যাতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারে। জেল-হাজতে পচে মরে।
"