নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ট্রেনে ছিনতাই, পাথর নিক্ষেপ থামছেই না

ঠেকানো যাচ্ছে না ট্রেনে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি। সবচেয়ে বেশি দুর্বৃত্তদের কবলে পড়ছেন ছাদে ওঠা অবৈধ যাত্রীরা। এছাড়া চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। প্রতিদিন পাথর নিক্ষেপে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে ট্রেনের জানালা। এতে যাত্রীদের পাশাপাশি আহত হচ্ছেন রেলের কর্মচারীরাও। এসব প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে লোকবল সংকটের কারণে চলন্ত ট্রেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। আর রেলওয়ে বলছে, অবকাঠামোগত সক্ষমতা না থাকার কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না যাত্রীদের ছাদে ওঠা।

এ দিকে, আন্তঃনগর ট্রেনের নিরাপত্তায় দুজন থেকে তিনজন কনস্টেবল দেওয়া হলেও মেইল এক্সপ্রেস কমিউটারে কোনো পুলিশ সদস্যই দিতে পারে না বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ। কারণ ফোর্সের স্বল্পতা। ময়মনসিংহগামী মেইল এক্সপ্রেসে ডাকাতি ও যাত্রী খুন হওয়ার পর ট্রেনের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি ট্রেনে সর্বোচ্চ ২১/২২টি বগি থাকে, এত বড় ট্রেনে দুই বা তিন জন কনস্টেবল দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় কি না সে প্রশ্নও উঠেছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের নিরাপত্তা আরো জোরদারের দাবি করেছেন যাত্রীরা।

অপরদিকে ট্রেনের ছাদে মহামারির মধ্যে যাত্রীবোঝাই করে নেওয়ার দায় এড়িয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেছেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা হলেও ট্রেনের নিরাপত্তা রেলওয়ে পুলিশ তাদের মতো করে করেন।’

সবশেষ চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তদের পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) তামান্না তন্নী নামে এক ছাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। শনিবার বোয়ালমারী রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করার সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া একটি পাথর মাথায় লেগে তিনি আহত হন। তামান্না তন্নী বশেমুরবিপ্রবি আইন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। একইদিন ঢাকা থেকে জামালপুরগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তের ছোড়া পাথরের আঘাতে এক যাত্রী আহত হন। ময়মনসিংহের গফরগাঁও স্টেশনের আউটার সিগন্যাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর তিনদিন আগে চলন্ত ট্রেনের ছাদে ডাকাতের ছুরিকাঘাতে দুজন খুন হন।

জানা গেছে, একটি আন্তঃনগর ট্রেনে এক থেকে দেড় হাজার যাত্রী থাকলেও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে মাত্র ২ থেকে ৩ জন রেলওয়ে পুলিশ। ফলে রাতের ট্রেনগুলোতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে অপরাধীরা।

যাত্রীরা বলেন, চোখের সামনে ছিনতাই হচ্ছে। স্টেশনে ভিড়ের মধ্য থেকেও ফোন, মানিব্যাগ সবই নিয়ে যাচ্ছে। মেইল, কমিউটার আর লোকাল ট্রেনগুলো ঢাকার বাইরে হয়ে যায় কানায় কানায় পূর্ণ, বগি ছাড়িয়ে যাত্রী ওঠে ছাদেও। এসব ট্রেনের অধিকাংশতেই থাকে না নিরাপত্তাকর্মী।

যাত্রীরা বলছেন, লোকাল ট্রেনগুলোতে অপরাধ হয় বেশি। সম্প্রতি জামালপুর কমিউটারে ডাকাতের ছুরিকাঘাতে নিহত হন দুই যাত্রী।

রেলওয়ে বলছে, ৯৫ শতাংশ স্টেশনে অবৈধ যাত্রী প্রবেশ ঠেকানো অবকাঠামোগত সক্ষমতা না থাকায় বন্ধ করা যাচ্ছে না ছাদে ভ্রমণ।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, ছোট স্টেশনে যাত্রীদের বের হওয়া বা ঢুকার জন্য কোনো আলাদা বেষ্টনী নেই। তাই যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে অবৈধ যাত্রীরা প্রবেশ করতে পারছে। তারা ট্রেনের ভেতরে ঢুকতে না পারলে ট্রেনের ছাদে উঠছে। অনেকে টিকিট কেটেও ছাদে বসতে পছন্দ করেন।

এসব দেখভালের দায়িত্ব রেলওয়ে পুলিশের হলেও তারা বলছেন, লোকবল সংকটের কারণে নিশ্চিত হচ্ছে না যাত্রী নিরাপত্তা।

ঢাকা জেলা রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমাদের অফিসার ফোর্সের সংখ্যা কিছুটা কম আছে। যার কারণে ট্রেনে যে পরিমাণ পুলিশ থাকার কথা সে পরিমাণে পুলিশ আমরা দিতে পারছি না। এ ছাড়া চলতি বছর চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পাথরের আঘাতে আহত হয়েছেন দেড়শতাধিক যাত্রী।

রেলওয়ে বিভাগীয় সংস্থাপন অফিসার (ডিটিও) সাজ্জাত হোসেন বলেন, ইদানীং চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়েছে। এর ফলে যাত্রীদের পাশাপাশি রেলের কর্মচারীদের জীবনও হুমকির মুখে পড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close