reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ধ্বংস হতে দেব না প্রকৃতি

নির্বাচন এলেই নানা প্রতিশ্রুতি ভেসে বেড়ায় প্রার্থীদের কথায়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মেয়র নির্বাচিত হয়েই রেজাউল করিম চৌধুরী কথা দিয়েছিলেন বন্দর নগরীকে পর্যটন রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার। ইতিহাসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত স্থাপনা গড়ে ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে চট্টগ্রামকে ঢেলে সাজানোর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার আট মাসের মাথায় সেসব স্বপ্নের অনেকটাই বাস্তবায়নের পথে।

নগরপিতার আসনে বসেই রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, সফলতা এলে সবার জন্যই আসবে। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। আর এককভাবে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে ভুল হওয়ার শঙ্কা থাকে। আমার চিন্তা নতুন প্রজন্মকে নিয়ে। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর এই সৈনিক।

তার সেসব কাজ প্রতিদিনের সংবাদের পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছেন কাজী আবুল মনসুর ও মো. শহীদুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা। বলেছেন, সব মতের মানুষের মত নিয়ে অতীতকে ফেলে নতুনের দিকে এগোনোর কথা, সবার সঙ্গে পরামর্শ করে, সবার মেধা কাজে লাগিয়ে টেকসই ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে চলার কথা। জোর দিয়েছেন জলাবদ্ধতা নিরসন ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য রক্ষায়।

১৯৫৩ সালে চান্দগাঁও থানার পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী জমিদার বংশ বহদ্দার পরিবারে জন্মগ্রহণকারী রেজাউল করিম চৌধুরী আইন বিষয়ে পড়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পিতা মরহুম হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। দাদা ছালেহ আহমদ ছিলেন খ্যাতিমান আইনজীবী ও ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত কমরেড ব্যাংকের (বর্তমানে বিলুপ্ত) প্রতিষ্ঠাতা। বড় ভাই অধ্যাপক সুলতানুল আলম চৌধুরী ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক রেজাউল করিম চৌধুরীর বড় মেয়ে তানজিনা শারমিন নিপুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

মেয়র বলেছেন, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং উন্নয়ন প্রকল্পে সমন্বয়, যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা-নর্দমা, খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নগরীর সবচেয়ে বড় সংকট জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়েছি। চট্টগ্রামের পাহাড় কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক নানা নিদর্শনও মুছে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাড়ছে ভূমিধস এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির ঝুঁকি। তাছাড়া হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সিআরবির নৈসর্গিক সৌন্দর্য শতবর্ষী বৃক্ষরাজি, ঐতিহাসিক নিদর্শনও নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

পাহাড় কাটা ও প্রকৃতি এবং ইতিহাস ঐতিহ্য ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে মেয়র বলেন, যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন তিল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না। মেয়র হিসেবে নয়, একজন নাগরিক হিসেবেও চট্টগ্রামকে একটি ঝুপড়ি শহরে পরিণত হতে দিতে পারি না। শুধু হাসপাতাল নয়, সিআরবিতে কোনোভাবেই কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। আমার বক্তব্য স্পষ্ট ‘প্রকৃতি ধ্বংস হতে দেব না’।

পাহাড় কাটা প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়গুলোর পাদদেশে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও পাহাড় ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও অপরিহার্য। পাহাড়ে অবস্থানরত বৈধ-অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ঝুঁকি এড়াতে সরকারি নির্দেশনাও মেনে চলতে হবে।

গৌরবদীপ্ত ঐতিহ্যের স্থান রক্ষণাবেক্ষণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার অংশ হিসেবে উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেখানে উন্মুক্ত মঞ্চ নাটক মঞ্চস্থ হবে। চট্টগ্রাম বিপ্লবীদের তীর্থভূমি। অনেক প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা এই চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। এখানে সিপাহি বিদ্রোহ, ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র লড়াইয়ে মাস্টার দা সূর্যসেনের বিপ্লবী কর্মকা-, ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ অনেক কালজয়ী ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। এসব ঐতিহ্যের স্থান শনাক্ত করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে নতুন প্রজন্মের ইতিহাস অন্বেষণ ও জ্ঞানের দুয়ার খুলে দেওয়ার স্বার্থেই। নগরীর যেসব স্থানে মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্মৃতিময় স্থান রয়েছে সংরক্ষণ করে স্থাপনা গড়ে তোলা হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়েও কথা বলেন মেয়র। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন নিজস্ব উদ্যোগে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকার ড্রেনেজ সিস্টেম উপযোগী নয়। নতুন করে খাল খনন করা হবে। অনেক খালে পানি নিষ্কাশন হয় না। এগুলো আরো প্রশস্থ করা হবে। এরই মধ্যে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে যেসব সমস্যা ছিল তা সমাধানে চসিক ও চউকের প্রকৌশলী পর্যায়ে একটি সমন্বিত কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পতেঙ্গা লিংক রোডসহ অন্য অবকাঠামো স্থাপন ও বাস্তবায়ন করা হবে। চসিক ও চউক সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন-ভিশন অনুযায়ী চট্টগ্রামকে গড়তে জনমুখী প্রত্যয় ও অঙ্গীকার পূরণে সমন্বিত উদ্যোগে আমরা কাজ করছি। এই লক্ষ্য পূরণে চসিক এবং চউক একসঙ্গে কাজ করে যাবে।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে শিশু কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ নেই। হাঁটার জায়গাও নেই। দখল হয়ে গেছে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ছোট করে হলেও খেলার মাঠ করার কাজ শুরু করেছি। এতে শিশু কিশোররা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।

ডেঙ্গু সচেতনায় ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন সম্পর্কে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরীতে মশক নিধন একটি প্রধান সেবামূলক কার্যক্রম। এত দিন যে পদ্ধতিতে ও ওষুধ ছিটিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল তাতে নানা ধরনের ক্রটি ও অসংগতি ছিল। ব্যবহৃত ওষুধও অকার্যকর ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনের সুপারিশ ও পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। ৪১ ওয়ার্ডে ১০ দিন করে ৩ দফায় মাসব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে। ডেঙ্গু থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে এই অভিযান চলমান থাকবে।

মেয়র বলেন, আমরা কার্যকর মশার ওষুধ ক্রয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কীটতত্ত্ববিদ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ ও যাচাই-বাচাই করে নতুন ওষুধ কিনেছি। এখন নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, ডাবের খোসা, ব্যাটারি সেল, নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানি তিন দিন পর পর ফেলে দিতে হবে। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি পরিষ্কার করতে হবে। অব্যবহৃত পাত্র উল্টে রাখতে হবে যাতে পানি না জমে।

বাড়ির ছাদ বাগানের টবে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন না করায় সম্প্রতি বিভিন্ন ভবন মালিককে জরিমানা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এ নির্দেশনা পালনে অবহেলা হলে চসিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিককে জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে।

আগামীকাল পড়ুন প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের খবর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close