নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্কুল খোলায় সুদিন ফিরেছে বেসরকারি শিক্ষকদের

নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে ৫৫২ দিন বন্ধ ছিল দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই দীর্ঘ সময়ে সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুলের শিক্ষকরা বেতন পেলেও বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বেকার হয়ে পড়েন। সংকটময় এই পরিস্থিতির মধ্যে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় সম্প্রতি সরকার বিদ্যালয় খুলে দিয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে খুশি শিক্ষকরাও। আর প্রাণ ফিরে পেয়েছেন আংশিক বেকার হয়ে পড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকররা। তাদের যেন সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। স্কুল খুলে যাওয়ায় তারা এখন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পাবেন বলে আশা করছেন। এছাড়া টিউশনি করেও বাড়তি আয় করতে পারবেন।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন পাঠদানের বাইরে থেকে শিক্ষকদের মাঝে এক ধরনের জড়তাও পেয়ে বসেছিল। প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ায় তারাও চেনারূপে ফিরেছেন। টিউশনির আশায় থাকা শিক্ষকরাও স্কুল খোলাতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। রাজধানী ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে এমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। রাজধানীর কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবার মাঝে কর্ম চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেতন-ভাতা নিয়মিত পেলেও বেসরকারি খাতের শিক্ষকদের দিন কেটেছে আংশিক বা বেতনহীন নিদারুণ কষ্টে। বাসা ভাড়া, পারিবারিক খরচ জোগানে গত দেড় বছর ধরে তাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেকে এরই মধ্যে অন্য পেশায়ও চলে গেছেন। অনেকে মোটরসাইকেলের রাইডশেয়ারিং সবজি বিক্রি, ছোট-খাটো ব্যবসা বা মার্কেটিংয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করেছেন। অনেকে রাজধানী বা জেলা শহরে টিকতে না পেরে চলে গেছেন গ্রামে। এখন প্রতিষ্ঠান খোলার পর তারা আবার পুরোনো স্বপ্ন বুকে নিয়ে ফিরে আসছেন শিক্ষকতায়। শিক্ষকদের এ সংখ্যা এমপিওভুক্তিদের চেয়েও বেশি।

আবার অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা অনেকেই টিউশনি নির্ভর শিক্ষকতা করেন। বিদ্যালয়ে তেমন একটা বেতন না পেলেও টিউশনি করে চলতেন তারা। করোনার কারণে দেড় বছরে তারাও বেশ সংকটে দিন পার করেছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তরা হাইস্কুলের একজন ইংরেজি শিক্ষক এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াতে খুবই খুশি। কারণ আমরা যারা এমপিওর বাইরে আছি তাদের বেতন-ভাতা একেবারেই কম। আমরা মূলত কিছু টিউশনি করে ভালোভাবে চলতে পারি। তবে গত দেড় বছর সেই সুযোগ পাইনি। আবার বিদ্যালয় থেকে সব মাসের বেতনও পাইনি। এখন যেহেতু বিদ্যালয় খুলেছে, প্রতিষ্ঠান কর্মমুখর হয়েছে, তাই বেতন না পাওয়ার ভয়টা দূর হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের অনেক মিস করেছি। সবসময় মনটা পড়ে থাকত স্কুলে। আসলে শিক্ষার্থীদের ছাড়া মনটা ভালো লাগে না। আমরা যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেছি। আমরা সব শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছি। অভিভাবকরাও সচেতন রয়েছেন।

রাজধানীর আজিমপুর এলাকার ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুণ কান্তি বিশ্বাস প্রতিবেদকে বলেন, আনন্দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ফেরাতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে ভালো লাগে। তবে অবশেষে মহাদুর্যোগে আমরা সবাই আবার একত্রিত হতে পেরেছি, এটাই বড় পাওয়া। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া দিকনির্দেশনা মানাতে কাজ করছি।

রাজধানীর মাটিকাটায় স্কাইলার্ক মডেল স্কুলের অধ্যক্ষ মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় আমরা খুব খুশি। কর্মের বাইরে বেশি দিন থাকা যায় না। দেড় বছরকে দেড় যুগের মতো মনে হয়েছে। এখন যেভাবে স্কুল খোলা হয়েছে, তাতে সবার মাঝেই এক ধরনের উৎফুল্লভাব এসেছে। এটা যাতে চলমান থাকে এজন্য স্বাস্থ্য সচেতনতায় আমরা বেশ মনোযোগী।

কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ বলেন, খোলার প্রথম দিন তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক উপস্থিতির হার ছিল ৯০ শতাংশ। দীর্ঘ সময় আমরা শিক্ষকদের ঠিকমতো দেখভাল করতে পারিনি। তবে এখন সবাই স্কুলে আসছে, কাজে যোগ দিয়েছে। যারা আসেননি, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছি।

রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন পর ছাত্রছাত্রীদের আমরা কাছে পাচ্ছি। এজন্য সব শিক্ষকের মধ্যেই একটা অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যবিধিসহ সার্বিক পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নির্দেশনা ছিল। সব মিলে আমরা ক্যাম্পাস যথাসম্ভব শিক্ষার্থীর জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করেছি। তিনি আরো বলেন, মহামারিকাল এখনো যায়নি। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছি।

দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলাতে বেসরকারি স্কুলের উদ্যেক্তারাও খুশি। কারণ মহামারি চলাকালীন অনেক আর্থিক লোকসান গুনতে হয়েছে। টিউশন ফি আদায় না হলেও অনেক ক্ষেত্রে মানবিক কারণে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিয়ে যেতে হয়েছে। আবার অনেক উদ্যোক্তা শিক্ষকদের খবরও নেয়নি।

এ বিষয়ে রাজধানীর তুরাগের আমজাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের স্কুলে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী আছেন, শিক্ষকও আছেন ৭০ জনের ওপর। গত দেড় বছরে ২০ শতাংশ টিউশন ফিও আদায় হয়নি। তারপরও অনেক শিক্ষককে বেতন-ভাতা দিতে পারিনি। অনেকের কষ্টের কথা শুনে নিজের থেকে কিছু বেতন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন স্কুল-কলেজ খুলেছে। আশা করি, শিগগির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close