নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নগরকান্দা-সালথায় আ.লীগে হাইব্রিডের ছড়াছড়ি

ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সালথার রাজনীতিতে হামলা-মামলা নিয়মিত ঘটনা। মতের অমিল হলেই সাধারণ জনগণের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। এসব নির্যাতন চালানোর সম্মুখভাগে রয়েছেন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী কিছু নেতা। আর এসবের পেছন থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর বিরুদ্ধে। নিজে দলীয় কোনো পদে না থাকলেও স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে পদ-পদবি ভাগিয়ে দেন তিনি।

বছরখানেক আগে থেকেই জামায়াত-বিএনপির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা ও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং সরকার উৎখাতের নাশকতায় লিপ্ত রয়েছে এমন কাউকে আওয়ামী লীগে যোগদান না করানোর হাইকমান্ডের দিকনির্দেশনা রয়েছে। তবে এগুলো না মানার অভিযোগ রয়েছে লাবু চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, লাবু চৌধুরী নেতৃত্বের আওয়ামী লীগে প্রতিটি জায়গায় বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা নেতারাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন। দুঃসময়ের কাণ্ডারিদের পাত্তা নেই। অনুপ্রবেশের কারণে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের উত্তরসূরিদের হাতে চলে গেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ। লাবু চৌধুরীর তোপে হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না কেউ।

নেতাদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দলীয় পদ-পদবি ভাগিয়ে নিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছে অনুপ্রবেশকারীরা। আর দলীয় হাইকমান্ডের বাইরে গিয়ে শাহদাব আকবর লাবু এবং তার আত্মীয়স্বজনরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। এলাকার দলীয় প্রতিটি সভা-সমাবেশেই লাবু চৌধুরীর পাশে একই স্টেজে জায়গা পাচ্ছে উপজেলার স্বীকৃত মাদক কারবারি ও এজাহারভুক্ত আসামিরা। জায়গা নেই ত্যাগীদের। শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরকান্দা ও সালথার নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলমান রয়েছে। প্রতিকার চেয়ে নগরকান্দা-সালথার ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে শতাধিক অভিযোগ দিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মান্নান মোল্লা বলেন, ‘প্রকৃত আওয়ামী লীগ যারা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এখন তাদের কাছে নেই। উপজেলার সর্বত্রই এখন হাইব্রিডের ছড়াছড়ি। আমরা কোনো ধরনের জীবন নিয়ে বেঁচে আছি। নালিশের জায়গা নেই আর তাদের ক্ষমতা বেশি নালিশ করেও কাজ হয় না।’

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও খুদেবার্তা দিয়েও এ ব্যাপারে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি। তার বক্তব্য জানার জন্য ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।’

এ বিষয়টি গেছে কেন্দ্রী আওয়ামী লীগ পর্যন্ত। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর পরামর্শ হলো তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা। তৃণমূল আওয়ামী লীগকে বিতর্কমুক্ত রাখা। তৃণমূলে বিভেদ মোটেও কাম্য নয়। নেত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছে।’

নগরকান্দা-সালথার বিষয়টি তাকে অবহিত করলে তিনি বলেন, শুধু একটি নির্দিষ্ট আসন নয়, সারা দেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ওপর স্থানীয় এমপি ও তার অনুসারীদের ‘খবরদারি’ করতে নিষেধ করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দলকে বিতর্কমুক্ত ও প্রভাবশালীদের দখলমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার। বঙ্গবন্ধুকন্যাও এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। দলীয় এমপি-মন্ত্রী, জেলা-উপজেলার প্রভাবশালী নেতাসহ যারাই বিতর্ক করবে, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। এটাই নেত্রীর পরিষ্কার নির্দেশনা।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close