নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল
স্বপ্নছোঁয়া প্রকল্পে বদলে যাবে বাংলাদেশ
স্বপ্নছোঁয়া তিন মেগা প্রকল্পে চেহারা বদলে যাবে বাংলাদেশের। আগামী বছরে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান-চলাচল শুরু হবে; চলবে ট্রেনও। একই সময় রাজধানীর উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটবে মেট্রোরেল। আর দেশের দক্ষিণ-পূর্বের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের সুড়ঙ্গপথও চালু হয়ে যাবে তত দিনে। ফলে ২০২৩ সালে অবকাঠামো সামর্থ্যে ভিন্ন এক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। স্বপ্নের এ তিন মেগা প্রকল্প শুধু অগ্রগতির প্রতীক হয়ে উঠবে না, এর সুফল দেশের অর্থনীতিতেও নতুন এক গতিও নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
তারা বলছেন, এগুলো চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির দিগন্ত বদলে যাবে। এর প্রভাব পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। সেই সঙ্গে এগুলো বাড়িয়ে দেবে দেশের মনোবল। ‘বাংলাদেশও পারে’- এমন সাহস সঞ্চার হবে মানুষের মধ্যে।
পদ্মা সেতু : যমুনা বহুমুখী সেতু বা বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে বিশ্বব্যাংক সমীক্ষা করে বলেছিল, এই সেতু বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৬ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু চালুর পর দেখা যায়, যতটা আশা করা হয়েছিল, তার থেকেও বেশি অবদান রেখে চলেছে এই সেতু। তারই ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
দেশের অবকাঠামো খাত নিয়ে গবেষণা করা অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা সেতুর প্রভাব হবে অপরিসীম। এতে মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠবে। আমরা অনুমান করেছিলাম, এই সেতু হলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে এখনকার বাস্তবতা সেই অনুমানের চেয়ে
অনেক বেশি।
মেট্রোরেল : মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক যাত্রা দেশবাসীর মধ্যে আশাবাদ এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি করেছে। জাপানের অর্থ ও কারিগরি সহায়তায় ঢাকাবাসীর স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ছুটে বেড়াবে ট্রেন। বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু মেট্রোরেলে লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট। মেট্রোরেলে প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার যানজট যেমন কমবে, তেমনি জিডিপিও ১ শতাংশ বাড়বে। ঢাকার অসহনীয় যানজটে কেবল মানুষের দুর্ভোগই বাড়ছে না, দেশও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কর্ণফুলীর বঙ্গবন্ধু টানেল : সরকারের জন্য অনেক বেশি গর্ব করার মতো প্রকল্প হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর নিচের সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেল। এ ধরনের পথ দেশের ইতিহাসে প্রথম। পানির তলায় এই সুড়ঙ্গপথটি কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়ি চট্টগ্রাম শহরকে এড়িয়ে সুড়ঙ্গপথ দিয়েই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করতে পারবে। তাহলে চট্টগ্রাম নগরীর যানজটও অনেকাংশে কমবে। টানেলটি চালু হলে বদলে যাবে চিরচেনা চট্টগ্রাম। নদী, পাহাড় আর সাগর-মোহনার চট্টগ্রাম পাবে নবরূপ। নদীর ওপারে গড়ে উঠবে আরেক চট্টগ্রাম। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আবাসন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হবে। চীনের সাংহাই নগরীর মতো চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি-টু টাউন। যার প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। সব মিলিয়ে ২০২৩ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন অধ্যায় শুরু হবে।
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল এই তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আশা করছি, আগামী বছর ইনশাআল্লাহ তিনটি মেগা প্রজেক্ট প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে আগামী বছরের জুনে পদ্মা সেতু, এরপর কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং ডিসেম্বরে এমআরটি-৬ প্রকল্পের আওতায় মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যে করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি পূর্ণ গতি ফিরে পাবে। ২০২২ সাল শুরু হবে নতুন উদ্যোমে; আরো সাহসিকতার সঙ্গে। বিশ্বাবাসীকে অবাক করে দিয়ে নিজস্ব অর্থে নির্মাণ করা পদ্মা সেতু চালু হবে আগামী বছর। মেট্রোরেল চলবে; খুলে দেওয়া হবে কর্ণফুলী টানেল। সে বিবেচনায় ২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। বাংলাদেশকে উন্নয়নের নতুন মহাসড়কে নিয়ে যাওয়ার বছর। আর তা ধরেই ২০২৩ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বলছে, পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কম করে হলেও ১ শতাংশ যোগ হবে। আমার বিবেচনায় এ হার আরো বেশি হবে। মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অংশ যোগ করবে।
"