কনক দেব, শিবগঞ্জ (বগুড়া)

  ০৬ আগস্ট, ২০২১

শিবগঞ্জের বাতিঘর সাবু দাদু

বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলায় প্রায় ৩০ বছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন আখতার হোসেন সাবু। শারীরিক অক্ষমতাও তাকে দমাতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী আখতার হোসেন সাবু তিন দশক ধরে তার এলাকার কয়েকটি স্কুলে বিনাবেতনে পড়াচ্ছেন। ফলও মিলছে হাতেনাতে। মোকামতলার স্কুলগুলোর ভালো ফলের পেছনে রয়েছে তার সরাসরি অবদান। একবাক্যে সবাই তাকে বলছেন, শিবগঞ্জের বাতিঘর। শিবগঞ্জের মোকামতলায় কেউ তাকে বলেন, সাবু স্যার। কারো কাছে তিনি সাবু দাদু। তার নাম এখন উপজেলা সদর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামে।

এক সময়ের মেধাবি ছাত্র আখতার সোহেন সাবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বিএডিসির প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ১৫ বছর চাকরি করার পর পন্ডেলাইসিস রোগে আক্রান্ত হন। ১৯৯২ সালে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে চলে আসেন নিজ গ্রামে।

মানুষের জন্য কিছু একটা করার আকাক্সক্ষায় শুরু করেন শিক্ষাদান কার্যক্রম। আশপাশের কয়েক গ্রামের শিক্ষার্থীরা তার কাছ থেকে বিনা পয়সায় পড়তে থাকেন। তার হাতে গড়া অনেক শিক্ষার্থী আজ বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত। এ ব্যাপারে মোকামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান জানান, সাবু দাদু প্রতিদিন আমাদের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক ঘণ্টা করে ক্লাস নেন। আমার প্রতিষ্ঠানসহ মোকামতলার আশপাশে পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ভালো ফল করছে এর পেছনে রয়েছেন এই সাবু দাদু।

মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছার রহমান খলিফা জানান, সাবু দাদু একজন সাদামনের মানুষ। তার মতো নিঃস্বার্থ নির্লোভ নিরহঙ্কার মানুষ এ যুগে পাওয়া বিরল। তার ঋণ মোকামতলা ইউনিয়নবাসী শোধ করতে পারবে না।

তিনি আরো বলেন, দুরারোগ্য স্পন্ডালাইসিসের কারণে তার শিরদাঁড় বেঁকে গেছে। এই ভারসাম্যহীন শরীর নিয়ে নীরবে সেবাব্রত পালন করে চলেছেন।

তিনি বিয়ে করেননি। চিরকুমার সাবু দাদা শুধু যে বিনা বেতনে পড়ান তা-ই নয়, পেনশনের টাকা এবং সংসারের আর্থিক আয় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দেন। বিদায়ী শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন এই জ্ঞানের বাতিঘর আখতার হোসেন সাবুকে একটি ল্যাপটপ, চার জোড়া ব্রেঞ্চসহ শিক্ষা উপকরণ প্রদান করেছিলেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, কেউ স্বেচ্ছায় তাকে সহযোগিতা করলে, সে অর্থও তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পোশাক, স্কুলের বেতনসহ বিভিন্ন কাজে ব্যয় করেন। সম্প্রতি তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন।

সাবু দাদুর ছোটবেলার সহপাঠী উথলি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কান্তি দেব বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে মোকামতলা উচ্চবিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছি। সাবু ছিল খুব মেধাবী। ১৯৬৭ সালে মোকামতলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান অর্জন করে সাবু। পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ফজলুল হক মোকামতলা উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে ভালো ফলের জন্য স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূসিত করেন এই অদম্য মেধাবীকে। সেইসঙ্গে মোকামতলা বিদ্যালয়কে অনুদান দেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আখতার হোসেন সাবুর সঙ্গে। তিনি জানান, যশ খ্যাতি তার দরকার নেই। নেতা হওয়ার খায়েশ নেই। তবে দুর্নীতিমুক্ত সুখী সমৃদ্ধশালী শান্তিপূর্ণ দেশ চান তিনি। এটাই আগামী প্রজন্মের কাছে তার প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close