প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
দৃষ্টিহীন ফটোগ্রাফার!
চোখে না দেখে কি ছবি তোলা সম্ভব? না কি শব্দ, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট? দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এক নারী। দর্শকরা তার তোলা ছবি দেখে ফটোগ্রাফারের প্রতিবন্ধকতার কথা মনেই রাখেন না। চোখের আলো না থাকলেও সিলিয়া কর্ন ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন। ১২ বছর বয়সে এক গাড়ি দুর্ঘটনার কারণে সিলিয়া দৃষ্টিশক্তি হারান। কিন্তু কল্পনা শক্তি কাজে লাগিয়ে তিনি রং চিনতে পারেন।
লাইট পেন্টিং কৌশল কাজে লাগিয়ে আলোকচিত্রী হিসেবে তিনি লং এক্সপোজারের মাধ্যমে ফটোর ওপর আলোর উৎসের নড়াচড়া ফুটিয়ে তোলেন। ৫০টিরও বেশি প্রদর্শনীতে তার তোলা ছবি দেখানো হয়েছে। সিলিয়া বলেন, ‘লাইট পেন্টিং শব্দটির অর্থ আলো আঁকা। অনেকটা আলোকেই তুলি হিসেবে হাতে তুলে নেওয়ার মতো বিষয়। সেটি দিয়ে আমি রেখা টেনে ছবি সৃষ্টি করতে পারি। আগে আমার কাছে রং খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু আমি অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আর রং দেখতে পাব না ভেবে খুব দুঃখ হয়েছিল। সে কারণেই ফটোগ্রাফি আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে আমার জীবনে আবার রং ফিরে এসেছে।
দর্শকদের কাছে সিলিয়ার দৃষ্টিশক্তির অভাব তেমন গুরুত্ব পায় না। এ প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ছবির সামনে দাঁড়ালে মানুষ আড়ষ্টতা কাটিয়ে তোলে। তাদের তখন মনেই থাকে না যে আমি অন্ধ। সেই মুহূর্তে সেই বাস্তব তাদের মনে থাকে না। তারা রঙের বিন্যাস ও ছবির বিশ্লেষণ নিয়ে মশগুল হয়ে পড়েন। তারপর আমার সঙ্গে আলোচনার সময়ে এক সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়।’
ক্যামেরা সেটিংয়ের মতো প্রযুক্তি সংক্রান্ত কাজের সময়ে সিলিয়ার একজন সহযোগীর সাহায্য লাগে। মডেলদের সঠিক পোজের মতো শৈল্পিক বিষয়ে অবশ্যই তিনি সিদ্ধান্ত নেন। সিলিয়া বলেন, ‘আমি আগে মডেলকে ছুঁয়ে দেখে তাদের উচ্চতা, চুলের ধরন, মুখের গঠন সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করি। তারপর প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তাদের ঠিক জায়গায় রাখার চেষ্টা করি। এক সহকারীর সাহায্যে তিনি সেরা দৃশ্যগুলো বেছে নেন। তার স্বামী গিডো সেই কাজ করছেন।
লাইট পেন্টিং ছাড়াও সিলিয়া কর্ন প্রচলিত পদ্ধতিতে ছবি তোলেন। যেমন বার্লিনের শার্লটেনবুর্গ কেল্লার পার্কে তিনি ছবি তুলেছেন। ছবি তোলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সিলিয়া কর্ন বলেন, ‘কখনো কখনো ভাবি এখানে একটা গাছ-গাছড়ার ঝোপ থাকতে পারে অথবা কারো হাঁটার শব্দ পাচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলেও হয়তো পরে দেখা যাবে, যে সেই মানুষটি ফ্রেম থেকে সরে গেছেন। তার বদলে ছবিতে একটা গাছ স্থান পেয়েছে। অথবা শুধু একটা পথ দেখা যাচ্ছে। সেটা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগে।’ সিলিয়া কর্ন অন্য যেকোনো মানুষের মতো নিজের সীমা পরীক্ষা করে দেখতে চান। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে তিনি ফটোগ্রাফিকে হাতিয়ার করেছেন। নিয়েছেন বিরাট চ্যালেঞ্জ। সূত্র : ডয়েসে ভেলে।
"