চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৪ জুন, ২০২১

ঝোপে লুকিয়েছিল ‘রেড পালমার’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের হর্টিকালচার সেন্টারের নালার পাশে ঝোপ-ঝাড়ের আড়ালে ঢাকা ছিল দুটি আম গাছ। গাছ দুটি কারো চোখেও পড়েনি। গত বছর জঙ্গল পরিষ্কার করার পর গাছগুলো চোখে পড়ে তবে ফলন না আসায় কেউ তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এ বছর প্রচুর আম ধরেছে থোকায় থোকায়। আমগুলোর সবুজের ওপরে লাল। পাকার পর দেখতে আরো আকর্ষণীয় হয়েছে। এই আমের জাত নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তারা। সেখানকার উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। খুঁজতে থাকলেন এই রঙিন আমের জাত উদ্ধারে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) বৈজ্ঞানিক আবু সালেহ মো. ইউসুফের শরণাপন্ন হলেন। সরেজমিন পরিদর্শন করে তিনি জানালেন রঙিন আমটি বিখ্যাত আমেরিকান ‘রেড পালমার’ জাতের। আমের পাশাপাশি এর ডালপালাগুলোও লাল রঙের।

জানা গেছে, আমেরিকার ফ্লোরিডার ভিক্টর মেল নামের এক ব্যক্তির অধীনে ১৯২৫ সালে বীজ থেকে জন্ম নেয় পালমার জাতের আমগাছ। পরের কয়েক দশক পর্যন্ত এই গাছ সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও ২০০৫ সালে এটি সরকারিভাবে নামকরণ করা হয় ‘আমেরিকান পালমার’ নামে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. হাবিবুল্লাহ জানান, গাছ দুটির বয়স প্রায় ৮-৯ বছর। কিন্তু ঝোপ-ঝাড়ে ঢেকে থাকায় আমাদের নজর এড়িয়ে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমগুলোর অন্যতম আমেরিকান রেড পালমার।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ বলেন, হর্টিকালচার সেন্টারের আমন্ত্রণে সরেজমিনে পরিদর্শন করে আমগুলো বিখ্যাত আমেরিকান রেড পালমার বলেই মনে হয়েছে। আম পাকলে আরো পরীক্ষার দরকার রয়েছে। এছাড়া এর বিশাল বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমেরিকান রেড পালমার জাতের আমের গড় ওজন প্রায় ৩৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। জুলাই মাসের মাঝামাঝির দিকে পাকে। এ সময় দামও ভালো পাওয়া যায়। দেখতে আকর্ষণীয়। এই জাতের আম আঁশহীন। মিষ্টতা (টিএসএস) ১৮ শতাংশ।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, বর্তমানে জাতটি বিভিন্ন বাসার ছাদে ও টবে চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি।

তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষীরশাপাতি-ল্যাংড়া জাতের আম শেষ হওয়ার পর পালমার জাতের আম পাকে। এই আমের স্বাদ ভালো মিষ্টি। পালমার জাতের আমের সবচেয়ে বড় গুণ এর আকর্ষণীয় রঙ। যা সবাইকে আগ্রহী করে। এই আমের জাত সংরক্ষণ, চারা বাজারজাতকরণ ও বিদেশে রপ্তানির সুযোগ করে দিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা লাভবান হতে পারবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে আমেরিকান রেড পালমার। বিশ্বব্যাপী চাহিদা আছে। এটি চাষাবাদে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তিনি আরো বলেন, এ জাতের আমগাছ প্রতিকূল পরিবেশে যে টিকে থাকতে পারে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ এত দিন ঝোপ-ঝাড়ে থেকেও বেঁচে ছিল। জঙ্গল সাফ করার পরই এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা এর চারা তৈরি শুরু করব। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেড পালমার জাতের আমের প্রসারে হর্টিকালচার সেন্টারের পক্ষ থেকে কাজ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close