প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ জুন, ২০২১

বিধিনিষেধে সতর্ক মহানগরী

চট্টগ্রামে নগরীতে রাত ৮টার পর থেকে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী বিভাগে এক দিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড, ফের এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে বিশেষ লকডাউন। খুলনায় লকডাউনের মধ্যেও সড়কে ছিল কৌতূহলীদের ভিড়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জে লকডাউনেও ছিল যানজট, ভাড়া চার গুণ বেশি ও ভোগান্তি। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধ-সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগরী ও উপজেলায় লকডাউন কার্যকর শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চট্টগ্রামে নগরীর সিটি করপোরেশন এলাকায় রাত ৮টার পর থেকে ওষুধের দোকান ছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট গতকাল বুধবার রাত ৮টা থেকে বন্ধ থাকবে। কেউ যাতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যেতে না পারে সেজন্য সৈকতে যাওয়ার সব প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করতে পুলিশকে কমিটির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে, চট্টগ্রাম-সিলেট, ময়মনসিংহ ও চাঁদপুর রুটে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকবে বলে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার জাফর আলম বলেন, চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীতে কঠোর ‘লকডাউনের’ পরও কিছুতেই থামছে না মৃত্যু ও সংক্রমণ। ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগে করোনায় ১৮ জনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। যে মৃত তালিকায় রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটেই চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৬ জন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এদের মৃত্যু হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালসহ এই বিভাগে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আর করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহীতে তৃতীয় দফায় ‘বিশেষ লকডাউনের’ মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (১৬ জুন) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এর আগে গত ১১ জুন থেকে রাজশাহীতে চলমান কঠোর লকডাউন শুরু হয়।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগে ৪ হাজার ৬৮৫ নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৪৭ জনের। সে হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগটিতে শনাক্তের হার ১৮.০৮ শতাংশ। বুধবার (২৩ জুন) দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমা আক্তার স্বাক্ষরিত প্রেরিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

খুলনা ব্যুরো : খুলনায় লকডাউনের মধ্যেও মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে। লকডাউনের প্রথম দিন কঠোরভাবে পালিত হলেও দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও মানুষের চলাচল ঠেকাতে মোড়ে মোড়ে বাঁশ বেঁধে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলো ও পিকচার প্যালেস মোড়ের অধিকাংশ দোকান বন্ধ রয়েছে। তবে, খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে মালিক ও কর্মচারীদের দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতাদের বিভিন্নভাবে ইশারা-ইঙ্গিতে ডাকতে দেখা গেছে। পুলিশের উপস্থিতি দেখলে যে যার মতো সটকে পড়ছে।

সকাল সোয়া ১১টার দিকে নগরীর পাওয়ার হাউস মোড়ে অর্ধেক শাটার নামিয়ে কিছু দোকান খোলা দেখা যায়। তবে, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি দেখে দ্রুত দোকান বন্ধ করে চলে যান ব্যবসায়ীরা।

ইসমাইল নামে একজন বলেন, রাস্তায় দেখতে এসেছি কেমন লকডাউন হচ্ছে। শফিকুল ইসলাম নামে অন্য একজন বলেন, ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না, তাই একটু রাস্তা থেকে ঘুরে যাচ্ছি। এদিকে, নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বাইরে থেকেও কোনো বাস আসেনি। খুলনার সঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে চলছে লকটাউন। তবু ভয়াবহ যানজট। যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে চার গুণ বেশি। প্রশাসন লকটাউনে কঠোর থাকার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। লকডাউনের প্রথম দিন ঢিলেঢালাভাবে চললেও দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় ও সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিল যানজট ও ভোগান্তি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মহামারি করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ২২ সকাল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ লকডাউন করা হয়েছে। লকটাউন সফল করতে প্রশাসন কঠোর থাকার ঘোষণাও দেওয়া হয়। প্রথম দিন মঙ্গলবার ঢিলেঢালাভাবে লকটাউন চললেও দ্বিতীয় দিনের চিত্র ভিন্ন। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বাভাবিক দিনের চেয়ে লকডাউনে যানজট বেড়েছে। বিনা বাধায় চলছে যাত্রীবাহী বিভিন্ন বাস, সিএনজি, ইজিবাইক, লেগুনা ও অটোরিকশা। দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল না করলেও হাইওয়ে পুলিশের উদাসীনতার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

সকালে সাইনবোর্ড এলাকায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচলানা করলে কিছুক্ষণের জন্য মহসড়ক ফাঁকা হয়ে যায়। আদালত চলে যাওয়ার পর আবার সেই আগের চিত্রে ফিরে আসে।

লকটাউনেও ভয়াবহ যানজট বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মনিরুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করলে রিং হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

হাইওয়ায়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, কেন যানজট হচ্ছে তা খবর নিয়ে দেখছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close