পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ১৯ মে, ২০২১

মোদিকে চিঠি

রাজ্যপালের অপসারণ চান মমতা

রাজ্যপাল পদে জগদীপ ধনকড়ের অপসারণ চেয়ে এবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া প্রয়োজনে বিধানসভায় তার অপসারণের দাবিতে প্রস্তাবও পেশ করতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস।

এদিকে নিম্ন আদালতের রায়ের ওপর কলকাতা হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ায় এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়।

তৃণমূলের অভিযোগ, জগদীপ ধনকড় এ রাজ্যের রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই কার্যত সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। শুরু থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মমতা সরকারের বহু নীতি নিয়ে সরব হন রাজ্যপাল। বিশেষ করে বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি, যা নিয়ে বারবার প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ ছিল, বিজেপি নেতাদের ভাষায় কথা বলছেন ধনকড়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর ধনকড়ের রাজ্য সরকারের প্রতি ক্ষোভ যেন আরো বেড়েছে।

তৃণমূলের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর শপথের দিনও ভোট-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে তার সমালোচনা করেন রাজ্যপাল। একই কাজ তিনি করেন মন্ত্রীদের শপথের দিনও।

রাজ্যপালের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ চরমে উঠেছে দুটি ঘটনায়। প্রথমত, রাজ্য সরকারের অনুমতি না নিয়ে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বেরিয়ে ছিলেন ভোট পরবর্তী সহিংসতা খতিয়ে দেখতে। দ্বিতীয়ত, মন্ত্রিসভার শপথের ঠিক আগে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী এবং বিধায়কদের বিরুদ্ধে নারদ মামলায় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি দেন। যার জেরে রাজ্যের দুই মন্ত্রী, এক বিধায়ক ও এক সাবেক মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। গত সোমবার যখন তৃণমূল কর্মীরা সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন তখনো রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল। এমনকি সিজিও কমপ্লেক্সে থাকাকালীনই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। এ সময় রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়।

এদিকে নিম্ন আদালতের রায়ের ওপর কলকাতা হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ায় এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়রা। ফলে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় রাত কাটিয়েছেন প্রেসিডেন্সি জেলে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের আবেদন করেছিল সিবিআই। সেই আবেদন খারিজ করে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের অন্তর্বতী জামিন মঞ্জুর দেয় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। তবে অভিযুক্তদের ছাড়েনি সিবিআই।

নিজাম প্যালেসে অভিযুক্তদের রেখে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। রাতেই শুরু হয় ভার্চুয়াল শুনানি। নিজাম প্যালেস চত্বরে তৃণমূলের বিক্ষোভের ঘটনাকে তুলে ধরে সিবিআই বক্তব্য তুলে ধরে বলে মামলা অন্য রাজ্যে স্থানান্তর করা হোক। এখানে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত চালানো সম্ভব নয়।

নিম্ন আদালত ৫০ হাজার টাকার বন্ডে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়ার পরেও সিবিআই ফিরহাদদের মুক্তি না দেওয়ায় অবমাননার অভিযোগ করেন আইনজীবী অনিন্দ্য রাউত।

হাইকোর্ট থেকে জামিন খারিজের পরে গভীর রাতের দিকে এই চার হেভিওয়েটকে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোর পৌনে ৪টা নাগাদ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং তৃণমূল ত্যাগী বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি তিনজনকেই এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সুব্রত মুখোপাধ্যায় কোনো রকম পরীক্ষা না করিয়েই হাসপাতাল থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে ফিরে যান।

গত সোমবার সকালে নারদা ঘুষকান্ডে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করে সিবিআই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close