নিজস্ব প্রতিবেদক
বেনারসি পল্লীতে এবারও খরা
মহামারি ঠেকানোর লকডাউনের মধ্যে রোজার আগে রাজধানীর অন্য বিপণিবিতানে জমিয়ে বিক্রি চললেও মিরপুরের বেনারসি পল্লীতে ক্রেতার অভাবে হাহাকার চলছে। গত বছরও মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে ঈদ ভালো যায়নি তাদের। এবার তা পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সাজালেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সব হিসাব উলটপালট করে দিয়েছে।
ঈদের কেনাকাটায় ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠার যে আশা দেখছিলেন বিক্রেতারা, ‘তার গুড়ে বালি’। উল্টো এখন কী পরিমাণ লোকসান হয় সেই চিন্তায় রয়েছেন তারা। মিরপুরে ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকার পাশে অবস্থিত এই বেনারসি পল্লীতে ঐতিহ্যবাহী বেনারসিসহ সব ধরনের শাড়ির পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। দোকানের সামনে কর্মীরা হাঁকডাক করলেও ক্রেতা খুবই কম। ফলে অনেক দোকানিই পার করছেন অলস সময়।
বিক্রয়কর্মীরা জানান, বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এক বছর ধরেই তাদের বিক্রি কম। এবার ঈদেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের তারা পাচ্ছেন না। আর আর্থিক সংকটের কারণে মধ্যবিত্তরাও আসছেন কম।
বেনারসি পল্লীর নীল আঁচল শাড়িজের ব্যবস্থাপক মো. মামুন বলেন, অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার বেচাবিক্রি ‘একেবারে নেই’। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার শাড়িও বিক্রি করতে পারছি না। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কাস্টমার আসে না। মানুষের মনে তৃপ্তিও নেই। তৃপ্তি নিয়ে যে একটা উৎসব করবে, সে ব্যাপারটা নেই। গত বছর দোকানদারি করতেই পারিনি। এই বছরও সেরকম অবস্থা।’
পল্লীর মধ্যে বেশ বড় দোকানের এই ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমাদের মতো বড় দোকানগুলোতে কিছু শাড়ি তাও বিক্রি হচ্ছে, ছোট দোকানগুলোতে বিক্রি একেবারেই নেই।’ এ কারণে ‘সীমিত লাভে’ শাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান মামুন।
ক্রেতা খরা নিয়ে হতাশার সুর লাল বউ বেনারসির বিক্রয়কর্মী মহসীন রেজারও। তিনি বলেন, ‘রোজায় একেবারেই বিক্রি নেই। একে তো করোনাভাইরাস, তার ওপর লকডাউন। আর সব মিলিয়ে মানুষের হাতে অর্থ নেই, শাড়ি কিনবে কীভাবে?’
এই দোকানের মালিক এফ হেলাল উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘শাড়ি ব্যবসায়ী বা কাপড় ব্যবসায়ীরা সাধারণত ঈদের ওপর নির্ভরশীল থাকে। ঈদের সময় একটা ভালো বেচাকেনা হয়, সারা বছর কোনো রকম খেয়ে পরে থাকে। সেই জায়গায় গত বছরের পর এবারও খারাপ অবস্থা। তা ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় তাদের আরো বেশি সংকটে ফেলেছে।’
অনলাইনে বিক্রি বেড়ে যাওয়ার ধাক্কাও বেনারসি পল্লীতে পড়েছে বলে মনে করেন তাওসিফ বেনারসি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম। তার মতে, করোনাভাইরাসের কারণে এখন ভিআইপি কাস্টমাররা বের হচ্ছে না। তারা অনলাইনে বসেই কেনাকাটা করছেন। আবার সাধারণ যারা, তারা বিলাসিতা বাদ দিয়ে খাবারের চিন্তা করছেন।
মনে রেখ শাড়িজের ব্যবস্থাপক মাসুদ কবির লিটন বলেন, তার ২২ বছরের কর্মজীবনে এমন সংকটময় পরিস্থিতি আগে দেখেননি। এখন আর এগুলো নিয়ে কথাই বলতে ইচ্ছা করে না। মানুষের হাতে তো টাকা নেই। কিনবে কী করে? আগে কাস্টমারের কারণে কথা বলার সুযোগও হতো না। আর এখন কাস্টমারের অপেক্ষায় সময় পার করতে হচ্ছে।
"