রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

  ০৭ মে, ২০২১

কোভিডের প্রভাব অর্থকষ্টে বাউলশিল্পীরা

বাউল গান গেয়ে আসর মাতাতেন তিনি। তার গান শোনে শ্রোতারা কখনো হাসত, কখনো কাঁদত, কখনো বা হতো আবেগাপ্লুত। নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে গানের আসর বন্ধ হওয়ায় পরিবার নিয়ে অর্থ কষ্টে আছেন এই কণ্ঠশিল্পী। এখন দিন গুনছেন কবে শেষ হবে এই দুঃসময়। যার সম্পর্কে কথাগুলো বলা হচ্ছে তিনি হলেন বাউলশিল্পী বোলাসামা রফিক। বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরে। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার।

বোলসামা রফিক বলেন, করোনাকালে গানের আসর ও রেকর্ডিং বন্ধ হলেও বাউলদের সহযোগিতা করেনি কেউ। গত বছর করোনায় বেহালা বিক্রি করে দলের এক সদস্যের বাড়িতে খাবার পাঠিয়েছি। চলতি বছরের শুরুতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে লকডাউনে উপার্জন বন্ধ। কিন্তু বাউলশিল্পীদের এখন কেউ খোঁজ রাখেনি।

রফিকের বাবা প্রয়াত হাসান আলী পাগল একজন বাউলশিল্পী। ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে বাউল গান ও বাদ্যযন্ত্রে হাতেখড়ি হয় তার। ২০০২ সালে রফিকের সরকারি চাকরি হলেও গানের টানে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে ওই বছরই পূর্বধলায় একটি আসরে বাউল গান গেয়ে গানের জগতে পথচলা শুরু তার। জীবনে প্রথম গানের আসরে গান গেয়ে ২৫০ টাকা সম্মানী পেয়েছিল রফিক। এখন সম্মানী পান চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। দল নিয়ে গেলে সম্মানী আরো বেশি। বাউল গান গাওয়ার পাশাপাশি রফিক নিজে গান লিখে সুর করেন। এ পর্যন্ত ১৭টি অ্যালবাম ও ইউটিউবে অর্ধশতাধিক গান বের হয়েছে তার। বাউল গানের চর্চা ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘হাসান রফিক বাউলশিল্পী গোষ্ঠী’। সেখানে শিক্ষার্থীদের গান ও বাদ্যযন্ত্র শেখানো হয়। বোলসামা রফিক বলেন, গান গাইলেই বাউল হওয়া যায় না। আমি নিজেও বাউল হতে পারিনি। বাউল হতে হলে গান ছাড়াও বাউল ধর্মের অপরাপর বিষয় সম্পর্কে চর্চা করতে হয়। লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকতে হয়। আমি সেই চর্চাটা করে যাচ্ছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রাগানের কিছু শিল্পী বাউল পরিচয়ে মঞ্চে গান গাইছে। এদের মধ্যে বাউলিয়ানার কোনো চর্চা নেই। এরা বাউল সংস্কৃতির জন্য হুমকি।

কারোনাভাইরাসের এই সংকট কাল শেষ হলে ফের গানের আসরে ফিরতে চান রফিক। গান গেয়ে মাতাতে চান আসর। তাই বাড়িতে বসে দল নিয়ে গান চর্চা করেন নিয়মিত। কিন্তু অভাবের তাড়নায় রফিকের স্ত্রী তাকে চাপ দিচ্ছেন গান ছেড়ে অন্য কাজ করে উপার্জন করার। এই অবস্থায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

বোলসামা রফিক বলেন, বাউল গান ভালোবেসে আজ পথে বসার উপক্রম হয়েছে। দুই সন্তানের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি। ঈদ ঘনিয়ে আসলেও পরিবারে আনন্দ নেই। অর্থকষ্টে থাকলেও হাত পাততে পারছি না কারো কাছে। হাত পাতা বাউলদের জীবন-সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। বাংলা মঞ্চের আহ্বায়ক এইচ এম খায়রুল বাসার বলেন, বাউল গান লোকসংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাউলশিল্পীরা এই সম্পদ টিকিয়ে রেখেছে। তাদের দুর্দিনে সবার পাশে দাঁড়ানো উচিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close