সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

  ০৭ মে, ২০২১

মৌসুমেও ফুলে নেই মধু সুন্দরবনে

খরচের টাকাও উঠছে না মৌয়ালদের

সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলীয় ইউনিয়ন গাবুরা। এই ইউনিয়নের ৪৩ হাজার বাসিন্দাদের অধিকাংশই উপকূলীয় নদী ও সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যান এই ইউনিয়নের চাঁদনীমুখা গ্রামের বনজীবী শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য ফরেস্ট অফিস থেকে অনুমতিপত্র নিতে হয়। ১৫ দিনের জন্য অনুমতিপত্র দেয় বনবিভাগ। এ বছর সুন্দরবনে মধুর সংকট। বৃষ্টি না হওয়ায় মৌচাকে মধু কম।

গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের মৌয়াল মাহবুব গাজী বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘ, সাপ, কুমির হিংস্র প্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করেই মধু সংগ্রহ করতে হয় আমাদের। জীবনের ঝুঁকি আর টাকা খরচ করে সুন্দরবনে গেলেও এবার খরচের টাকাও উঠছে না। ফুলে মধু নেই। খালি চাক পড়ে আছে।’

সুন্দরবনের খাঁটি মধুর চাহিদা রয়েছে প্রচুর। মৌসুম এলেই সুন্দরবনে ছুটে যান মৌয়ালরা। বনের গাছে মৌমাছির বাঁধা চাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এরপর মৌয়ালদের সংগ্রহ করা সুন্দরবনের মধু চলে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিন্তু এবার মৌসুমেও সেই অবস্থা নেই। বৃষ্টি না থাকায় মধু আহরণের পরিমাণ কমেছে। মৌসুম শুরুর ২৫ দিনে মধু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৯৪ কুইন্টাইল। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের মৌসুম; চলবে জুন মাস পর্যন্ত। সুন্দরবন থেকে খলিশা, বাইন, গরান ও কেওড়া ফুলের মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালরা।

খুলনা বিভাগীয় বন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালীনি, কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদক এই চারটি স্টেশন থেকে ৩৯৬টি বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) নিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবন গেছেন ১ হাজার ৫০০ মৌয়াল। ১ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৩৯৪ কুইন্টাইল। মোম সংগ্রহ হয়েছে ৪১৮ দশমিক ২০ কুইন্টাইল। রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭০০ টাকা। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ হয়েছিল ২০০৬ দশমিক ৫ কুইন্টাইল। মোম সংগ্রহ হয়েছিল ৬০১ দশমিক ৯৫ কুইন্টাইল। মধু ও মোমে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২১ লাখ ৬ হাজার ৮২৫ টাকা। মধু সংগ্রহ করতে ৫৭৩টি বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) নিয়ে সুন্দরবন গিয়েছিলেন ৪ হাজার ১৩ জন।

সুন্দরবন উপকূলীয় বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের নীলডুমুর খেয়াঘাট এলাকার বড় মধু ব্যবসায়ী তোহিদুল ইসলাম। মধুর অনেক খুচরা বিক্রেতা ও রাজধানীর একটি ফাস্টফুড কোম্পানিকে মধু দেন এই ব্যবসায়ী। তিনি জানান, এ বছর সুন্দরবনে ১০টি নৌকায় শতাধিক মৌয়াল মধু সংগ্রহ করতে বনে গেছেন। খরচ হয়েছে ৩৩ লাখ টাকা। এ বছর বনে মধু নেই। গত বছর ১৫০ মণ মধু সংগ্রহ হয়েছিল। এ বছর মাত্র ৫০ মণ মধু পেয়েছি। প্রতি কেজি বিক্রি করেছি ৮০০ টাকায়। ৩৩ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকাও উঠেনি। বৃষ্টি না হলে এ বছর আমার অনেক টাকার লোকসান হয়ে যাবে।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্চের বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ জানান, সুন্দরবন থেকে ফেরা মৌয়ালরা অভিযোগ করছেন, এ বছর বনে মধু নেই। বৃষ্টি না থাকার কারণে মূলত এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এই কার্যালয় থেকে মধু সংগ্রহের জন্য চলতি এপ্রিল মাসে প্রথম ধাপে বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) দেওয়া হয়েছে ১৪৮টি। এই বিএলসিতে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে গেছেন ১ হাজার ৭৬ জন মৌয়াল। মধু সংগ্রহ হয়েছে ৫৩৮ কুইন্টাইল। যার মূল্য ৪ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা। মোম সংগ্রহ হয়েছে ১৬১ দশমিক ৪০ কুইন্টাইল। যার মূল্য ১ লাখ ৬১ হাজার ৪০০ টাকা।

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, চলতি বছরে মৌসুমে সুন্দরবনে মধুর পরিমাণ কমেছে। বৃষ্টি না থাকায় খাবার পাচ্ছে না মৌমাছিরা। বনের ভেতরে দেখেছি, মৌমাছিরা খাবার না পেয়ে পানি খাচ্ছে। এ বছর ফুলও কম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close