ইমরান হোসেন সুজন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা)

  ০৯ মার্চ, ২০২১

বাস থেকে প্রতিবন্ধী নারীকে ছুড়ে ফেললেন হেলপার

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ভাড়া দিতে না পারায় ঢাকা-বান্দুরা রুটে চলাচলকারী এন মল্লিক পরিবহনের বাস থেকে এক বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন পরিবহনের হেলপার। এর প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দুপুরে নবাবগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীসহ দোহার-নবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

এর আগে গত রবিবার সকালে ওই পরিবহনের একটি এসি বাস থেকে কেরানীগঞ্জ উপজেলার রোহিতপুর এলাকায় তাকে ফেলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়ে যায়। লক্ষাধিক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করছেন। কমেন্ট করে অনেকেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আহত ওই প্রতিবন্ধীর বাড়ি জেলার দোহার উপজেলা জয়পাড়ার ঋষিপাড়া এলাকায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এ বিষয়ে জানতে এন মল্লিক পরিবহনের স্বত্বাধিকারী নার্গিস মল্লিকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া যায়। যোগাযোগ করা হলে, আত্মপক্ষ সমর্থন করে ওই পরিবহনের জুয়েল নামে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাসের হেলপার নারীটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেননি। বাসে উঠতে গিয়ে নারীটি একাই পড়ে গেছে।’

ভিডিওতে দেখা যায়, এন মল্লিক পরিবহনের চলন্ত বাস গতি কমিয়ে এক নারীকে টেনে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেন। ফেলে দেওয়ার পর ওই নারী প্রচুর কান্না করছিলেন। চোখের সামনে এ ঘটনায় দেখে হতবাক আশপাশের লোকজন। সহযোগিতার জন্য তারা এগিয়ে গেলে আহত ওই নারী ইশারায় জানান, তিনি কথা বলতে পারেন না। তবে হাতে কলম দেওয়া হলে পুরো ঘটনা লিখে জানান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা এই তথ্য জানান।

ঘটনার সময় চিরকুটে লিখে আহত বাকপ্রতিবন্ধী জানান, কোনাখোলা থেকে এন মল্লিকের এসি বাসে উঠেন তিনি। তার কাছে ভাড়া ছিল না। তিনি লিখেন, ‘আমার থেকে কোনো দিন ভাড়া নেয় নাই, ওরা ভাড়া চায়, দিতে না পারায় এমুন ব্যবহার।’ তিনি আরো লিখেন, ‘এখন যাব কী করে, আমার পা দিয়ে হাঁটতে পারছি না, ব্যথা। আমারে একটু ব্যাথার ওষুধ দিবা? দুই কান ভন ভন করছে, ব্যথা করছে, মাথা ধরছে।’

ভিডিওটি গত রবিবার রাতেই নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ঘটনা নিশ্চিত করে গতকাল সোমবার বিকালে প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ‘কতটা নির্দয় হলে একজন মধ্যবয়সি নারীকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া যায়, এমন প্রশ্নের উত্তর হয়তো কারোই জানা নেই। ঠিক নারী দিবসের এক দিন আগেই ঘটেছে এমন ঘটনা।’

কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে গতকাল সকালে বিআরটিএকে বলেছি। যেহেতু গাড়ির নম্বর স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তাই আমরা গাড়ির নম্বরসহ বিআরটিএর অভিযোগ সেলে আমরা জানিয়েছি।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এন মল্লিক পরিবহনের জুয়েল নামে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাসের হেলপার নারীটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেননি। বাসে উঠতে গিয়ে তিনি একাই পড়ে গেছেন।’

এদিকে ভুক্তভোগী নারীর সন্ধানে কাজ করছে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য ওই নারী বা যাত্রীদের কল্যাণে কাজ করা কোনো সংগঠনের অভিযাগ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই বক্তব্য জানান।

এদিকে এন মল্লিক পরিবহনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করছেন ফেসবুকাররা। তাদের অভিযোগ, এই ধরনের ঘটনা ওই পরিবহন আগেও ঘটিয়েছে। এ নিয়ে চালক-হেলপারের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয় না। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত রবিবার সকালে কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা থেকে এক বাকপ্রতিবন্ধী নারীযাত্রী এন মল্লিক পরিবহনে উঠেন। ভাড়া দিতে না পারায় হেলপার-সুপারভাইজার মিলে রুহিতপুর এলাকায় ওই নারীকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে ওই নারী মারাত্মকভাবে আহত হন।

মানববন্ধনে ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক স¤পাদক উমর ফারুক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাসদীদ আহমেদ, নাহিদুল আলম সাজু, মনোয়ার মৃধা জনি, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রানা, দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি দীপ্ত দেওয়ান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ নাহিদুল আলম নাদিম সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close