রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি

  ০২ মার্চ, ২০২১

পানকৌড়ির অভয়াশ্রম যাদব বাবুর শিমুলগাছ

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার শান্তিপুর থেকে কাঁঠালডাঙ্গী যাওয়ার পথে সড়ক ঘেঁষা একটি গ্রামের নাম কেউটান। সেই গ্রামের পাশ দিয়ে ক্ষীণ ধারায় বয়ে গেছে কুলিক নদী। গ্রামেই যাদব রায়ের বাড়ি। সেই বাড়ির পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিশাল আকারের শিমুলগাছ। তার চারপাশে সবুজের সমারোহ। শীতে পাতা ঝরা ডালপালা ছড়ানো ওই শিমুলগাছের নগ্ন ডালে উঁকি দিতে শুরু করেছে ফুলের কুঁড়ি। আর সেই গাছের ডালে ডালে দেখা গেছে শত শত পানকৌড়ি পাখির উড়াউড়ি। গতকাল শনিবার কেউটান গ্রামে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানকৌড়ি পাখির কোনোটি ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যাচ্ছে, কোনোটি আবার গাছের চারদিকে চক্কর দিয়ে উড়ে ফের গাছের ডালে এসে বসছে। পড়ন্ত বিকালের সোনালি রোদে ঝিকমিক করছিল পাখির সাদা পালক। শিমুল গাছটি ছিল পানকৌড়ির অভয়ারণ্য। একটি গাছে একসঙ্গে এত পানকৌড়ি দেখে চোখ আটকে যায় যেকোনো পথচারীর। গাছটির মালিক যাদব রায়। তিনিও উপভোগ করছেন পানকৌড়ির খুনসুটি। একই সঙ্গে পাখিকে যাতে কেউ বিরক্ত না করে, তার ওপর কড়া নজর রাখেন নিয়মিত।

যাদব রায় বলেন, ‘পাখিদের সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর এখানে পাখি আছে বলেই প্রতিদিন দূর-দূরান্ত অগণিত পাখিপ্রেমী আসছেন। এটা দেখে ভালো লাগে।

তিনি আরো বলেন, ‘শীত চলে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে পাখিশূন্য হয়ে পড়ে শিমুলগাছ। তখন বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আবার যখন শুরু হয় শীতকাল। তখন পাখিগুলোও ফিরে আসে। তখন বুকটা ভরে যায়। পাখি কিছু ক্ষতি করছে, তবে এসব ক্ষতি মেনে নিয়েছি।’

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, ওই দৃশ্য দেখতে ভিড় করেছে বহু মানুষ। নিরাপদ পরিবেশ পেয়ে গাছটি হয়ে উঠেছে পাখিগুলোর অভয়াশ্রম। আর পাখিগুলোর কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। পাখি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ।

কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলছেন, আগের মতো এবারে একটু কম দেখা মিলছে পাখিদের। কিছু মানুষ পাখি শিকার করছেন। বারণ করেও ফল হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

কেউটান গ্রামের বাসিন্দা দুলাল বলেন, রাতে পাখিগুলো শিমুলগাছেই থাকে। সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ে খাবারের খোঁজে। আবার সন্ধ্যা হলেই ফিরে আসে। দেখতে ভালো লাগে।

পাখিপ্রেমী সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, পাখিগুলোর কারণে এলাকার সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে। পাখি আমাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রচুর ভূমিকা রাখে। তাই পানকৌড়ি পাখিগুলোর নিরাপত্তা দরকার। সেজন্য প্রশাসনকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলকান জুলকার নাইন কবির বলেন, পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি পাখিগুলোর নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনিক তৎপরতা আরো জোরদার করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close