সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
ডিম ফুটিয়ে অভাব জয়
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের প্রত্যন্ত গ্রাম মহেষ রৌহানী। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এক সময় একবেলা-আধাবেলা খেয়ে দিন কাটত। কিন্তু হারিকেন বাতির তাপে হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে ব্যবসা করে তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের সাফল্য দেখে উপজেলায় গড়ে উঠেছে ২০০-এর বেশি হারিকেন হ্যাচারি। যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে হাজারো মানুষের শুধু দেশেই নয়, সীমানা পেরিয়ে হারিকেন হ্যাচারির হাঁসের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে পাশের দেশ ভারতেও। দেশের বেকার ও কর্মহীনদের শুধু চাকরির খোঁজে না ছুটে এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন হারিকেন বাতির হ্যাচারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত শাহ আলম, মুকুল হোসেন, আবদুল মান্নান ও রাশেদা খাতুন। তারা বলেছেন, এই ডিম ফুটিয়ে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে এখন তারা স্বাবলম্বী। তারা সুখের মুখ দেখেছেন, জয় করেছেন অভাবকে।
উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মহেষ রৌহানী গ্রামের শাহ্ আলম নামের একজন হাঁসের বাচ্চা ব্যবসায়ী বলেন, ২০০৪ সালের দিকে তিনি হারিকেন বাতির সাহায্যে প্রথমে ১৫০০ ডিমের বাচ্চা ফুটিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বছর যেতে না যেতেই যার পরিধি বেড়ে হয় প্রতি ২৮ দিনে দুই লাখেরও বেশি প্রতি মাসের লাভ হতে থাকে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মতো। তার সাফল্য দেখে নিজ গ্রামেই গড়ে উঠেছে ১০০-এর বেশি হারিকেন হ্যাচারি। গত বুধবার বিকালে সরেজমিনে মহেষ রৌহানী, কাজিপুর, বিনসাড়া, কুশাবাড়ী ও বিন্যাবাড়ী গ্রামের বেশ কয়েকটি হারিকেন বাতির হ্যাচারি ঘুরে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উন্নত জাতের হাঁসের ডিম সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। সেগুলো পানিতে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে দেন। পরে ছোখের আন্দাজে যাচাই-বাছাই শেষে মাটি অথবা ইটের তৈরি পাকা ঘরের মধ্যে বাঁশের মাচার ওপর সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন। এর পর মাচার নিচ থেকে হারিকেন বাতির সাহায্যে দরকার মতো তাপ দেওয়া হয়। ২৫ দিন পর ডিমগুলো ফুটতে শুরু করে, তখন কাপড়ের আবরণ তুলে দেন। ২৮ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। প্রতিটি একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করা হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকায় ।
শাহ আলমসহ হাঁসের বাচ্চার ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন, আবদুল মান্না, খয়বার আলী, কাদের হোসেন ও রাশেদা খতুন বলেন, সব সময় অভাব অনটন লেগেই থাকত তাদের সংসারে। অর্ধাহারে-অনাহারে কোনোভাবে কেটেছে দিন। মাটির দেয়াল ও টিনের চালের ঘর দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না, এখন তাদের অনেকের ইটের পাকা বাড়ি হয়েছে। হারিকেন বাতির হ্যাচারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাজারো নারী-পুরুষ।
হাঁসের বাচ্চার ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় হাঁসের বাচ্চার উৎপাদন খুবই সীমিত। ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার আগেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তাদের কাছে বাচ্চার জন্য বায়না আসতে থাকে। এমনকি দেশের সীমান পেরিয়ে তাদের হারিকেন হ্যাচারির হাঁসের বাচ্চা কুষ্টিয়া-যশোর হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেরও যাচ্ছে। সরকারি সহায়তা পেলে এসব হ্যাচারির পরিধি বাড়িয়ে চাহিদানুযায়ী হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব। সর্বোপরি দেশের বেকার ও কর্মহীনদের শুধু চাকরির খোঁজে না ছেুটে এ ধরনের কর্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আখতারুজ্জামান ভুইয়া এ প্রসঙ্গে জানান , হারিকেন বাতির হ্যাচারি ব্যবসায়ীরা যেকোনো ব্যাংক থেকে সামান্য সুদে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। দাপ্তরিকভাবে তারা চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ অফিস এই ডিম ফোটানো খামারিদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে।
"