নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

দেশে এখন পানির জন্য মিছিল-মিটিং হয় না

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের মানুষকে পানির জন্য এখন আর মিছিল-মিটিং করতে হয় না। চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হালিশহর পানির জন্য হাহাকার ছিল। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহরের মানুষ এখন পানি পাচ্ছে। দেশে পানির সংকট নেই। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতে আয়োজিত চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের অধীন ‘পতেঙ্গা বুস্টিং পাম্প স্টেশনের’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের আগে চট্টগ্রামের মানুষ সুপেয় পানির সংকটে ভুগেছে জানিয়ে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৩৬ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে চট্টগ্রাম ওয়াসা তখন ১৩-১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চট্টগ্রামে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করেছে। আজ চট্টগ্রামবাসী পানি পাচ্ছে।’

চট্টগ্রামের মেয়র প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু মেয়র নন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সব দায়িত্ব একজনকে চাপিয়ে দিলে হবে না। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকার সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কিন্তু এই অগ্রাধিকারের সুযোগ আপনাদের কাজে লাগাতে হবে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গেটওয়ে। নদীর আশপাশে আবর্জনা পড়ে থাকছে, জায়গা ইজারা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি করে দখল করা হচ্ছে, যা কখনোই কাম্য নয়। এটি কোনো দস্যুর দেশ নয়।’

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর পশ্চিমতীরে কাফবো, সিইউএফএল, কোরিয়া ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোনসহ পটিয়া, আনোয়ারা এবং বোয়ালখালী এলাকায় জনগণের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য দৈনিক ছয় কোটি লিটার ক্ষমতার ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ ও পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলমান। আশা করি প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ করার কথা থাকলেও এর আগেই শেষ হবে।’

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও পটিয়ার সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, বোয়ালখালীর সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন, চন্দনাইশের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন।

উল্লেখ্য, পতেঙ্গা বুস্টিং পাম্প স্টেশনটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরের বন্দর ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার বিশাল জনগোষ্ঠীর পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এই বুস্টিং পাম্পের মাধ্যমে দৈনিক ৪ দশমিক ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এর আগে, চট্টগ্রাম ওয়াসার বাস্তবায়নাধীন রাঙ্গুনিয়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।

সৎ থাকার অনুপ্রেরণা পেয়েছি বাবার কাছ থেকে

এদিকে গত শুক্রবার রাতে র‌্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে-ভিউয়ে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চট্টগ্রাম কসমোপলিটনের ‘চেইন হ্যান্ডওভার সিরোমনি ২০২১’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যে মন্ত্রণালয়ে আছি সেখানে বিলিয়ন, মিলিয়ন টাকা অবৈধ পথে আয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু আমি এখনো চেষ্টা করি নিজেকে সৎ ও স্বচ্ছ রাখতে। আমার সৎ থাকার এ আদর্শ আমি পেয়েছি বাবার কাছ থেকে। যত দিন বেঁচে থাকব মানুষের পাশে থাকব। সৎ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে বাকি জীবন কাটাতে চাই।’

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাধারণ পরিবার থেকে বড় হয়েছি। অনেকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। সংসদ সদস্য হিসেবে মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছি। এখন বড় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেও সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। সফলতা ও সততার পেছনে অনুপ্রেরণা পেয়েছি বাবার আদর্শ থেকে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি ধনী পরিবারের সন্তান নই। পারিবারিকভাবে তেমন কোনো ধন-সম্পদ পাইনি। তবে আমি গরিব মানুষ নই। আমার বাবা আল্লাহওয়ালা মানুষ ছিলেন। বাবা-মা গ্রামে থাকতেন, গ্রামে আমার জন্ম হয়েছে। আমি যখন স্কুলে পড়ছি, তিনি অবসর নিয়েছেন। কৃষি আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল আমার পরিবার। সংসার কোনো মতে চলত কৃষির আয় দিয়ে।’

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রথম রোজগার ছিল ১০০ টাকা। বাবার হাতে এ টাকা তুলে দেওয়ার পর তিনি খুশি হলেন। কিন্তু একটু পরে মুখটা কালো করে বললেন, বাবা তোমরা বড় হয়েছো, রোজগার করবা, তোমার এ টাকার ওপর কোনো সন্দেহ থাকলে আমাকে দিও না। আমার জমিজমা যা আছে তার কিছু অংশ বিক্রি করে খেয়ে গেলেও আমার বাকি জীবন চলে যাবে। আমি সারা জীবন ভালো ও সৎ রোজগারের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। বাকি জীবন আমি অসৎ রোজগার থেকে মুক্ত থাকতে চাই।’

জেসিআই চট্টগ্রাম কসমোপলিটনের সভাপতি টিপু সুলতান সিকদারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। কি-নোট স্পিকার ছিলেন জেসিআই বাংলাদেশের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। আরো বক্তব্য দেন জেসিআই বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ-উন নবী প্রিন্স ও চট্টগ্রামের সদ্য বিদায়ী সভাপতি শহীদুল মোস্তফা চৌধুরী মিজান।

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হিসেবে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল চিটাগাং কসমোপলিটনের নতুন পরিচালনা পরিষদের কাছে পুরোনো পরিষদ দায়িত্ব হস্তান্তর করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close