আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

কক্সবাজারে লবণের দাম নিয়ে অনিশ্চিত চাষিরা

কক্সবাজারে আশানুরূপ লবণ উৎপাদন হলেও অর্থ সংকটে লবণচাষিরা। মাঠভর্তি লবণ থাকলেও মৌসুমের শুরু থেকেই নেই কেনাবেচা। এতে খরচ জোগাতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে চাষিদের। লবণের দাম কম থাকায় চাষিদের বিক্রি এবং ব্যবসায়ীদের কিনতেও অনীহা।

এদিকে লবণশিল্পকে রক্ষা করতে ও দাম বাড়াতে বিসিক নানা তৎপরতা চালালেও কেন বাড়ছে না, তা নিয়ে চাষিদের মধ্যে নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অবহিত করার পরও দাম না বাড়ায় অনেকটা ভেঙে পড়েছেন লবণচাষিরা।

বাংলাদেশ লবণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী জানিয়েছেন, লবণশিল্পকে বাঁচাতে লবণ বোর্ড স্থাপনের বিকল্প নেই। লবণের দাম নিশ্চিত করতে সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বিভিন্ন স্থানে অবহিত করছেন। আরো নেতারা যারা আছেন সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে লবণ চাষে নিরুৎসাহিত হবেন চাষিরা।

কক্সবাজার বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ‘লবণের ন্যায্য দাম নিয়ে আমরা এখনো আশাবাদী। সরকার কোনোভাবেই লবণ আমদানি করার পক্ষে নয়। তবে কৌশলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অপ্রয়োজনীয় সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে থাকে। বর্তমানে যে পরিমাণ লবণ উদ্ধৃত রয়েছে এবং উৎপাদিত হচ্ছে, এতে লবণ ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।’

মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা গ্রামের লবণচাষি নুরুল কবির প্রায় ছয় একর জামিতে লবণ চাষ করেছেন। এরই মধ্যে প্রায় দুই হাজার মণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। দাম কম থাকায় এক কেজি লবণও বিক্রি করতে পারেননি। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি জানান, ‘প্রতিদিন আট শ্রমিক কাজ করছেন লবণমাঠে। তাদের দৈনিক খরচ ও বেতন দিতে হয় প্রায় ছয় হাজার টাকা। এতে প্রতি মাসেই খরচ পড়ছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।’ নুরুল কবির বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে চাষ শুরু করেছি। এরই মধ্যে জমির ইজারা মূল্য ছাড়া পলিথিন ও বেতন বাবদ খরচ পড়েছে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা। লবণের ফড়িয়াদের কাছ থেকে নিয়ে এসব টাকা খরচ করেছি। এখন তারাও টাকা দিচ্ছে না, লবণও বিক্রি হচ্ছে না। এতে চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

চকরিয়ার বদরখালীর ৩ নম্বর ঘোনার লবণচাষি বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ফড়িয়া খরচ বাদ দিয়ে মাঠপর্যায়ে চাষিরা লবণের দাম পাচ্ছেন প্রতি মণে মাত্র ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই দরে লবণ বিক্রি করলে পুঁজির ৩০ ভাগ লোকসান যাবে। লবণের দাম বৃদ্ধি পাবে এমন আশা নিয়ে চাষ শুরু করলেও দাম বাড়ার কোনো সুযোগ দেখছি না। এখন চাষ করেই আমরা বিপাকে পড়েছি। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী মৌসুমে আর চাষি পাওয়া যাবে না। প্রজেক্টে লবণ চাষের চেয়ে চিংড়ি চাষ অনেক লাভজনক হবে।’

বড় মহেশখালীর সাবেক মেম্বার মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, প্রিতিটি লবণচাষি এখন অর্থ সংকটের মধ্যে রয়েছে। কোনো আয় নেই। লবণ উৎপাদন করে আমরা বিপাকে পড়েছি। চাষিদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ ছাড়া সরকার মাঠপর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে লবণ না কিনলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। চাষিরা আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়ায় ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন। তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close