প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

সর্বভুক রাজ কাঁকড়া!

নরওয়ের উত্তরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করা মানুষের জীবনে উন্নতি নিয়ে এসেছে কিং ক্র্যাব বা বড় রাজ কাঁকড়া। আয়ের উৎস না থাকায় একসময় গ্রাম বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন ব্যুগোয়নেসের বাসিন্দারা। কিন্তু এখন তারা সুখে আছেন। টাকাপয়সার অভাব নেই। তবে দুঃসংবাদ এই যে, এই জাতের বড় কাঁকড়া সর্বভুক। সাগরের বা সমুদ্রখাড়ির সে অংশে থাকে সেখানকার মাছ, জলজপ্রাণী ও প্রাণবৈচিত্র্য খেয়ে শেষ করে ফেলে।

জার্মানির ডিয়র্ক হাইসভাগার প্রায় ১২ বছর ধরে নরওয়ের উত্তরে বাস করছেন। তিনি আর্কটিক সাগর পছন্দ করেন। রাশিয়া সীমান্তের কাছে দর্শনীয় স্থান দেখাতে পর্যটকদের নিয়ে যান তিনি। কিং ক্র্যাব বা বড় কাঁকড়া দর্শনীয় বস্তুগুলোর মধ্যে একটি। ট্যুর শুরুর এক দিন আগে তিনি সাগরের ১৮০ মিটার গভীরে কাঁকড়া ধরার ফাঁদ পাতেন। পরের দিন সেই ফাঁদে অনেক কাঁকড়া ধরা পড়ে। সারা বিশ্বেই এটি এক মজাদার খাবার। কিন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। খরগোশের মতোই এদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ে।

নরওয়ের উত্তরে আর্থিক সংকটে থাকা এলাকায় এসব কিং ক্র্যাব সুখের বার্তা নিয়ে এসেছে। যেমন ব্যুগোয়নেসের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত জেলেদের গ্রামে। ১৯৮৯ সালে গ্রামবাসী তাদের গ্রাম বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। কারণ আয়ের উৎস না থাকায় তরুণরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সেখানে এখন থাকার হোটেল আর ছোট একটি রেস্তোরাঁও আছে। স্থানীয়দের রোজগারের ব্যবস্থাও হয়েছে।

জেলে লেইফ ইঙ্গেলে প্রথম ব্যুগোয়নেসের পানিতে বড় কাঁকড়ার দেখা পেয়েছিলেন। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে সোভিয়েত গবেষকরা ব্যারেন্টস সাগরে কাঁকড়া ছেড়েছিলেন। কিন্তু নিজের জালে কিং ক্র্যাব পাওয়ার আগে বিষয়টি জানতেন না ইঙ্গেলে। তিনি বলেন, ‘প্রথম ধরা পড়া একেকটি কাঁকড়ার ওজন ছিল ১০-১২ কেজি। আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু কাঁকড়াগুলো না থাকলে শহরে আজ কোনো মাছ প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা থাকত না। দু-তিনটা ছাড়া জেলে নৌকাও থাকত না। আজ এখানে ১৫-১৬টা নৌকা আছে।’

কাঁকড়াগুলোর উপস্থিতি জেলেদের জন্য সুখবর হলেও নরওয়ের পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের জন্য সেটা চিন্তার বিষয়। কারণ কাঁকড়াগুলো প্রায় সবকিছু খেয়ে ফেলে, যা আশপাশের ইকোসিস্টেমের জন্য হুমকি। ইদানীং ব্যুগোয়নেস থেকে আরো দক্ষিণেও এদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেরিন রিসার্চের ইয়ান সুন্ডেট বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে দেখেছি, কাঁকড়াগুলো ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতেও মানিয়ে নিতে পারে। তার মানে তারা ভূমধ্যসাগরেও থাকতে পারবে! যেখানেই এই কাঁকড়া যায় সেখানেই সাগরের প্রাণিজগৎকে ধ্বংস করে। ঝিনুক, তারা মাছের মতো কিছু প্রজাতি একেবারে হারিয়ে গেছে।’

কিং ক্র্যাব, যা মনস্টার ক্র্যাব নামেও পরিচিত, তাদের প্রাকৃতিক কোনো শত্রু নেই। এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নরওয়ের মৎস্যসম্পদ কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। ডিয়র্ক হাইসভাগার তার অতিথিদের অল্প সময়ের মধ্যে যে খাবার দিতে পারছেন, সেটা সাধারণত ইউরোপ, এশিয়ার অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোয় পাওয়া যায়। বছরে প্রায় দুই হাজার টন কিং ক্র্যাব রপ্তানি করে নরওয়ে। পর্যটক কিংবা স্থানীয় মানুষ, সবাই কাঁকড়া পছন্দ করেন। কর্তৃপক্ষকে ভারসাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে, কারণ ওই অঞ্চলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা কাঁকড়ার সংখ্যা ধরে রাখতে চায়। পাশাপাশি সর্বগ্রাসী কাঁকড়া যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। নরওয়ের উত্তরের বাসিন্দারা আশা করছেন, কাঁকড়ার লাভজনক ব্যবসা যেন অনেক দিন টিকে থাকে। এরই মধ্যে তারা কাঁকড়ার একটি মনুমেন্ট তৈরি করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close