রিয়াজ মুন্না, চবি

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

জঙ্গিদের পোস্টারে সয়লাব বন্ধ ক্যাম্পাস

করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে জনজীবন থমকে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলেও রাজনৈতিক তৎপরতা এখনো সীমিত রয়েছে, বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সুযোগে আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। সম্প্রতি রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রকাশ্যে তাদের লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে।

সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। দাপ্তরিক কার্যক্রম চললেও বন্ধ রয়েছে হল ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। ক্যাম্পাস বন্ধ, শিক্ষার্থী নেই। কিন্তু থেমে নেই জঙ্গি তৎপরতা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার-লিফলেট লাগিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে জঙ্গি সংগঠন।

গত কয়েক মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য ধরা পড়েছিল, এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার নতুন করে তৎপর হয়ে উঠছেন তারা।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসের শিক্ষকদের আবাসিক ভবনসংলগ্ন নিপবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেখা গেছে হিযবুত তাহরীরের পোস্টার। সর্বশেষ গত সোমবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক ভবনের মাঝামাঝি আইটি ফ্যাকাল্টির সামনের রেলিংয়ে সুতলিতে আবারো ঝুলতে দেখা গেছে একই সংগঠনের পোস্টার।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে পরবর্তী সময়ে তা নামিয়ে নেয় নিরাপত্তা দপ্তরের লোকজন। বিগত বছরগুলোতে শাটল ট্রেন ও ক্যাম্পাসের বাইরে প্রচারণা চালালেও এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পোস্টার লাগাচ্ছে তারা।

‘হিযবুত তাহরীর উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ’ কর্তৃক প্রকাশিত এসব পোস্টারে লেখা রয়েছে, খিলাফত রাষ্ট্র ধ্বংসের ১০০ বছর (হিজরি ১৩৪২-১৪৪২)। বিশ্বের ১০০ শহর থেকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি হিযবুত তাহরীরের আহ্বান : ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠা করুন।’

১৫ দিনের মধ্যে দুবার জঙ্গি সংগঠনের পোস্টার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে অস্থিরতা ও ভীতির সঞ্চার হয়। বিষয়টিকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের পোস্টারিংকে অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন তারা। জঙ্গিদের অস্তিত্ব ও কার্যক্রমের নতুন মাত্রা বলে মত তাদের।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চবি সংসদের সভাপতি গৌরচাঁদ ঠাকুর বলেন, ক্যাম্পাসে হিযবুত তাহরীরের এমন ঝটিকা পোস্টারিং, ব্যাপারটা মোটেও স্বস্তিকর না। সন্ত্রাস, মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজাধারী এই সংগঠনের তৎপরতা তাদের শক্তি জানান দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া। এই ধরনের ঝটিকা কার্যক্রম প্রশ্রয় পেলে পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। মৌলবাদ এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিযবুত তাহরীরসহ এ ধরনের সব সংগঠনের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন বিশ্ববিদ্যালয়ের ও রাষ্ট্রের জন্য আবশ্যক। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন তার সন্ত্রাস ও মৌলবাদবিরোধী আদর্শিক অবস্থান থেকে এই ধরনের তৎপরতার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকবে।

ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষাকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা ও ত্রাস সৃষ্টি করতে এ ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম দিনার বলেন, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হঠাৎ করে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পোস্টারিংকে আমরা ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্টের অপতৎপরতা হিসেবে দেখছি। যেকোনো অপতৎপরতা রুখে দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

জঙ্গিবাদী যেকোনো কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ব্যাপারে চবি ছাত্রলীগ জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তারা চোরাগোপ্তাভাবে পোস্টার লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল এ ব্যাপারে বলেন, হিযবুত তাহরীরের এ পোস্টারিং জামায়াত-শিবির ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের একটি এজেন্ডা। বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয়দের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টির অপপ্রয়াসের অংশ এটি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এসব বিষয়ে আরো তৎপর হওয়ার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সজাগ ও সচেতন থাকার অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, পোস্টারিংয়ের বিষয়টি শুনেই আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো নামিয়ে এনেছি। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। অনভিপ্রেত পরিস্থিতি ঠেকাতে আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করছি।

বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম দেখা যায়। ২০০৯ সালে জঙ্গি সংগঠন উল্লেখ করে নিষিদ্ধ করা হয় হিজবুত তাহরীরকে। কিন্তু নিষিদ্ধের ১০ বছরেও থেমে থাকেনি জঙ্গি সংগঠনটি। সক্রিয় আছে তাদের মিডিয়া সেলের কার্যক্রম। অন্য জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন সংগঠনটি। হিজবুত তাহরীরের অধিকাংশ সদস্যই বিভিন্ন প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী। থেমে থেমে প্রচার প্রচারণা চালালেও নিষিদ্ধ সংগঠনটি এখনো ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকান্ড চালাতে সক্ষম হয়নি। শিক্ষিত ও আধুনিক তরুণদের উগ্রবাদী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছেন তারা। ভবিষ্যতে তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সেজন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক নিরাপত্তা জোরদার, কঠোর নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close