আদিল হোসেন তপু, ভোলা

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২১

বাল্যবিয়ে রুখতে পুথির আসর

ভোলা জেলার গ্রামে গ্রামে চলছে পুথি গানের আসর। পুথি গানের আসরের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন। গানে গানে বাল্যবিয়ের নেতিবাচক দিকগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এর লক্ষ্য বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা।

আয়োজকরা বলছেন গ্রামের মানুষকে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সচেতন করতে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া পুথি গানকে বেছে নিয়েছেন তারা। গত ২০ জানুয়ারি থেকে চলছে এই গানের আসর গ্রামে গ্রামে।

সরেজমিনে জানা গেছে, ভোলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোলার সামাজিক সংগঠন স্বপ্নীল শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠনের তরুণ-তরুণীরা পুথি গানের আসর করছেন। তাদের মূল্য লক্ষ এই জেলা থেকে বাল্যবিয়ে সম্পূর্ণ রোধ করা। ইউনিসেফ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা ত্বরান্বিতকরণ (এপিসি) প্রকল্পের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে পুথি গানের পাশাপাশি নাটকও পরিবেশন করেন এই সংগঠনের তরুণ-তরুণীরা।

এদিকে ব্যতিক্রমী আয়োজনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সচেতন এবং প্রতিরোধে বিষয়ে গ্রামের মানুষের কাছেও বেশ সাড়া পাচ্ছেন তারা। ভোলা সদর উপজেলার চর ভেদুরিয়া গ্রামের মো. ইকবাল, সাহাবুদ্দিন, তাবাসুম ও মাওয়া জানান, গত কয়েক দিন ধরে শুনেছি গ্রামে গ্রামে পুথি গানের আসর হচ্ছে। আমাদের চর ভেদুরিয়া গ্রামের পুথি গানের আসর বসলে আমরা সবাই ছুটে আসি। আমরা পুথি গানের মাধ্যমে জানতে পারি ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়েকে বিয়ে দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। কারণ কম বয়সে মেয়েরা সংসার জীবন সম্পর্কে বুঝে না। এছাড়াও কম বয়সে বিয়ের পর ওই মেয়ে যদি মা হয় তখন তার প্রসবের সময় প্রচুর ব্যথা, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। যার কারণে অনেক সময় সে মারা যায়। এছাড়াও বাল্যবিয়ের কারণে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। তারা আরো জানান, এখানে এসে আমরা অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি। যা আগে কখনো শুনি নাই। আমাদের বোন ও মেয়েদের কখনো ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেব না। এমনকি আমাদের গ্রামে ১৮ বছরের নিচে কারো বিয়ে হতেও দেব না।

সামাজিক সংগঠন স্বপ্নীল শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি ইভান তালুকদার জানান, ভোলা জেলায় বাল্যবিয়ের হার একটু বেশি। আমরা অভিভাবকদের বিভিন্ন সময় বুঝালেও তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। পরে আমরা স্বপ্নীল কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন পুথি গানের আসরের আয়োজন করি। আমরা জানি, ব্যতিক্রমী কোনো কিছুর মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করলে তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেবে। এজন্যই আমরা এ পুথি গানের আসর করছি।

তিনি আরো জানান, পুথি গানের মাধ্যমে আমরা একটি স্কুলছাত্রীর জীবন কাহিনী তুলে ধরছি। সে ওই ছাত্রীর অল্প বসয়ে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বিয়ের পর সংসার জীবনের নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। সে সন্তানসম্ভবা হলে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায় এবং রোগা হতে থাকে। পরে প্রসবের সময় তার মৃত্যু হয়। পুথি গানের কাহিনিগুলো গ্রামের মানুষরা অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমরা পুথি গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছি।

কোস্ট ট্রাস্টের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা ত্বরান্বিতকরণ (এপিসি) প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. মিজানুর রহমান জানান, ভৌগোলিক কারণে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে ভোলায় বাল্যবিয়ের হার অনেক বেশি। বিশেষ করে নদীভাঙন ও চরাঞ্চল বেশি থাকার কারণে মেয়েদের অভিভাবকরা দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেন। তাই এসব মানুষদের সচেতন করতে কোস্ট ট্রাস্ট ইউনিসেফ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা ত্বরান্বিতকরণ (এপিসি) প্রকল্পের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সহায়তা করছে। এর মাধ্যমে মানুষ আনন্দ ও মজা পাওয়ার পাশাপাশি সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে বাল্যবিয়ের হার ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ। এবং ভোলা জেলায় এই হার ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close