নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২১

সানেমের জরিপ

মহামারিতে দারিদ্র্য বেড়ে দ্বিগুণ

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। দরিদ্র মানুষের সব ধরনের ব্যয় করার ক্ষমতা কমেছে, তবে আয়ের সিংহভাগ খাদ্য কিনতে ব্যয় করার প্রবণতা দেখা গেছে। নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে আসা মানুষগুলো নিজে থেকে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তা ছাড়া সার্বিক রেমিট্যান্স আয় বাড়লেও জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলো জানিয়েছে, আগের বছরগুলোর তুলনায় গত বছর বিদেশে থাকা স্বজনরা কম টাকা পাঠিয়েছেন। দেশব্যাপী খানা পর্যায়ের জরিপের ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। দারিদ্র্য ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব শীর্ষক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে গতকাল শনিবার এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণা তথ্য তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

ড. সেলিম রায়হান জানান, ২০১৮ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সঙ্গে যৌথভাবে দেশের ৬৪ জেলার ১০ হাজার ৫০০ খানার ওপর জরিপ হয়। ওই খানার মধ্যে গত বছর ৫ হাজার ৫৭৭টির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে সানেম। এ দুই জরিপের ফল তুলনা করে গবেষণাটি চালানো হয়েছে।

জরিপের তথ্য তুলে ধরে সেলিম রায়হান বলেন, গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, দেশে সার্বিক দরিদ্রতার হার বেড়ে ৪২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সালে পরিকল্পনা কমিশন ও সানেমের জরিপের ফলে এ হার ছিল ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা জরিপে সার্বিক দরিদ্রতার হার ছিল ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিবিএসের খানা জরিপে ২০১৬ সালে গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি সানেম জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, করোনাকালীন ২০২০ সালে এ হার বেড়ে ৪৫ দশমিক ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শহরাঞ্চলে সার্বিক দরিদ্রতার হার ২০১৬ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে বেড়ে হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেলিম রায়হান আরো জানান, গত বছর চরম দরিদ্রতার হার বেড়ে সাড়ে ২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সালে জিইডি-সানেমের জরিপে যা ছিল ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে চরম দরিদ্রতার হার ২০১৮ সালে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং গত বছর বেড়ে হয়েছে ৩৩ দশমিক ২০ শতাংশ। শহরাঞ্চলে চরম দরিদ্রতার হার ২০১৮ সালে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ১৯ শতাংশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম এম আকাশ বলেন, কোভিডের কারণে যে ক্ষতি হলো এটি কি স্বল্পমেয়াদি নাকি এত বছরের অগ্রগতির ওপরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ল, তার ব্যাখ্যার বিষয়। এটি নির্ভর করবে ক্ষতির ধরন কেমন, কোন খাত কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সরকার যে জরুরি পদক্ষেপ নিল তা কতটুকু পর্যাপ্ত তার ওপর। দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অবস্থা পরিবর্তনের জন্য যত দ্রুত সম্ভব চালু করতে হবে, স্বাস্থ্য খাতে ভর্তুকি দিতে হবে, কর্মসংস্থানের পরিবর্তনগুলো স্বীকার করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এ সমীক্ষার মাধ্যমে মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদি পর্যায়ে দরিদ্রতার ওপর প্রভাব পড়ছে এবং কোভিড-১৯-এর পূর্বের দরিদ্রবিষয়ক অর্জনগুলো কোভিড-১৯-এর প্রভাবে উলটে যাবে, সেই ধারণাটি আরো জোরালো হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, জরিপের তথ্য বলছে দারিদ্র্যের ভৌগোলিক আওতা ছড়িয়ে পড়েছে, গ্রামেও যে হারে দরিদ্রতা বেড়েছে শহরেও সেই একই হারে বেড়েছে। আবার যেখানে আগে দরিদ্রতা কম ছিল সেখানেও ব্যাপক বেড়েছে, যেখানে বেশি ছিল সেখানেও ব্যাপক বেড়েছে। শিক্ষায় দরিদ্রতা বেড়েছে, শিক্ষায় ব্যয় কমেছে, বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থায় বেশির ভাগই অংশ নিতে পারছে না।

ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, একটি বিশাল সংখ্যক মানুষ আছেন যারা দারিদ্র্য রেখার ওপরে ছিলেন, কিন্তু কোভিডের আঘাতে দারিদ্র্য রেখার নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে অর্থাৎ তারা দারিদ্র্য না হয়েও দরিদ্রতার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close