নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২১

হাতিরঝিলের মতো করা হবে দখলমুক্ত খাল

হোটেল সোনাগাঁওয়ে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, আগে ঢাকা শহরে ৫৩টি খাল ছিল, বর্তমানে রয়েছে ৩৯টি। এসব খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে হাতিরঝিলের মতো রূপান্তর করে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালু করা হবে। গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে মেঘনা নদীকে কেন্দ্র করে নেওয়া মহাপরিকল্পনার চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন খালে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছে। একই সঙ্গে খালে থাকা বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। খাল দখলমুক্ত হয়ে গেলে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা হবে।

ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দখলমুক্ত, দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ চলছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পদ্মা, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বালু ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। এ ছাড়া সরকার তুরাগসহ ঢাকার অদূরে বেশ কিছু নতুন শহর গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় জিনিসপত্রের ভোগ বেড়েছে। আর এ কারণেই ময়লা-আবর্জনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নদ-নদী, খালগুলোয় বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য নিষ্কাশন হওয়ার ফলে পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়।’ তিনি আরো বলেন, মেঘনা নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের জন্য আজকের এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।

মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সবার সমন্বিত উদ্যোগে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’ তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করার পর নদীরক্ষাসহ অনেক জাতীয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। নদীপথ ব্যবহার করেই বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের চলাচলের পাশাপাশি পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো।

সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই উল্লেখ করে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরকে সুন্দর একটি শহরে রূপান্তরিত করতে চাই। আমার মনে হয়, আমরা মিলে একসঙ্গে কাজ করি। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা, সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। আমরা সবাই একত্র হয়ে কাজ করছি। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব ইনশাআল্লাহ।’

উল্লেখ্য, মেঘনা নদীকে দখল, দূষণ ও নাব্যতা সংকট থেকে রক্ষা করতে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৪ লাখ ১ হাজার ৩১৬ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্থানীয় সরকারের বিভাগ এবং আইডব্লিউএমের সহকারী পরিচালক সালেহ খান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। প্রকল্পটির মেয়াদ ১৮ মাস। ২০২২ সালের আগস্টে মাস্টারপ্ল্যানটির কাজ শেষ হবে।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদী থেকে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করতে পারে না ঢাকা ওয়াসা। কারণ ওই পানিটা খুব বেশি দূষিত। সে কারণে আমাদের পানি আনার জন্য যেতে হচ্ছে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে। সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে এবং বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণরোধ কল্পে মাস্টারপ্ল্যান করেছে। এখন অ্যাকশনপ্ল্যান চলছে। আমাদের মন্ত্রীর নেতৃত্বে দ্রুতগতিতে নদীর জায়গা দখলমুক্ত করার কাজ চলছে। ঠিক সে রকমই মেঘনা নদী, যা এখনো অত্যন্ত ভালো আছে। কিন্তু মেঘনা নদী যেন কোনো দিন বুড়িগঙ্গার মতো দূষিত না হয়, সেজন্য মেঘনা নদীর একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করা জরুরি বলে সরকার মনে করে। সে কারণে এই মাস্টারপ্ল্যানটা তৈরি করার জন্য আইডব্লিউএম এবং সিডিআইএস আমাদের বাংলাদেশের দুটি নামি এবং অত্যন্ত প্রফেশনাল কনসালটিং ফার্মকে আমরা নিয়োগ করেছি।’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এবং ওয়াসার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close