খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
অনশনে অসুস্থ নোমান বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা প্রায় ৭০ ঘণ্টা অনশনের পর শিক্ষার্থীর মোবারক হোসেন নোমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের চিকিৎসক তার চিকিৎসা করেন। অনশনরত আরেক শিক্ষার্থী ইমামুল ইসলাম সোহানও বেশ অসুস্থ, হাঁটার মতো শক্তি নেই তার। আর নোমানের হাত-মুখ ফুলে গেছে, কথা বলতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার কানিজ ফাতিমা জানান, ওই শিক্ষার্থীর ব্লাড সুগার অনেক নিচে নেমে গেছে। এখন থেকে সার্বক্ষণিক নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার। এ ঘটনায় খুলনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মানববন্ধন হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা আন্দোলনকালে দুই শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ ও অ্যাকাডেমিক কাজে বাধা দানের অভিযোগ এনে ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুম ইসলাম সোহান ও বাংলা ডিসিপ্লিনের মোবারক হোসেন নোমানকে যথাক্রমে দুই বছর (চার টার্ম) ও এক বছর (দুই টার্ম) বহিষ্কারাদেশের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে, ওই সাজা প্রত্যাহারের দাবিতে গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে তারা আমরণ অনশন শুরু করেন। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ‘উসকানি ও সহযোগিতার’ অভিযোগ এনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে বহিষ্কারের জন্য কারণ দর্শানোর চূড়ান্ত নোটিস পাঠানো হয়।
এদিকে, খুলনার সচেতন নাগরিক ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যানারে গতকাল খুলনার শিববাড়ী মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন খুলনার সচেতন নাগরিক ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. বাহারুল আলম, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির এস এম শাহাদাত হোসেন ও এস এ রশিদ, খুলনা জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সঞ্জিত মন্ডল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন পরিষদের সৌমিত্র সৌরভ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের আলামিন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ফরহাদ হাসান রাজ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের পলাশ, সচেতন নাগরিক নেতা মহসিন, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান হাবিব এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমানোসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের করণে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও আন্দোলনে একাত্মতা জানানোয় তিন শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকারের দাবি জানানোয় শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল ও সেই দাবিতে সংহতি জানানোয় শিক্ষকদের চাকরি থেকে অপসারণের যে সিদ্ধান্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়েছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা চাই, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের এ স্বৈরাচারী আচরণ থেকে সরে আসবে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ভিন্ন মত ও নতুন কথাবার্তা সহ্য করতে না পারলে দুর্গন্ধ ও পচন শুরু হয়। এটিই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পচিয়ে ফেলা হচ্ছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে তা সংবিধান প্রদত্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতার খেলাপ। এ ছাড়া মানবন্ধনে শিক্ষার্থী নাজমুল মৃধার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী মামুন হায়দার রানা, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ইমন হোসেন বাপ্পী প্রমুখ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনকে অপরাধ বিবেচনা করে শিক্ষার্থী বহিষ্কার এবং সেই শিক্ষার্থীদের সমর্থনে এগিয়ে আসা শিক্ষকদের বরখাস্ত করার চেষ্টা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’
এ ছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করেন। অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অশান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপতৎপরতা চলছে বলে বিবৃতি দিয়েছে খুলনা মহানগর ও জেলা শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত ঘটনা না জেনে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য বা বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
"