আহমেদ জামিল, সিলেট
‘পলো-বাওয়া’ উৎসব
গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে এখনো টিকে আছে ‘পলো-বাওয়া’ (পলই দিয়ে মাছ ধরা) উৎসব। সময়ের বিবর্তনে এই উৎসবের আমেজ এখন অনেকটা হারিয়ে গেছে। খুব দ্রুত সামাজিক ও ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সমাজের পুরোনো অনেক ঐতিহ্য ও রীতি-নীতি। সে কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে বিল বাঁওড়ে পলো-বাওয়া শব্দটি একেবারে অপরিচিত। তবে এখনো এই হারিয়ে যাওয়া উৎসবটি আঁকড়ে ধরে রেখেছে সিলেটের বিশ্বনাথের মানুষ। প্রতি বছরের মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পলো-বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা হয়। গতকাল শনিবার বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের পাশের বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পলো-বাওয়া উৎসব। এদিন সকাল থেকে উৎসবকে ঘিরে নিজ নিজ পলো, হাতাজাল, উড়ালজাল ও লাঠিজালসহ মাছ ধরার নানা ধরনের উপকরণ নিয়ে হাওর পাড়ে গিয়ে সমবেত হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সময় হাওর পাড়ে ভিড় জমান উৎসুক জনতা। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সাড়ে ১১টা বাজতেই একসঙ্গে সবাই পলো নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন হাওরে। শুরু হয় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। পলোর ঝপাত ঝপাত শব্দে হিম শীতল পানিও মুহূর্তের মধ্যে গরম হয়ে যায়। এদিকে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে পেশাদার জেলের চেয়ে সৌখিন মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি। মাছ ধরার আনন্দে অনেকে সন্তানদের নিয়ে পানি নামেন। তাদের জালে ধরা পড়ে বড় বড় বোয়াল, শোলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। কেউবা আবার মাছ শিকার করতে না পারলেও পানিতে নেমে হইহুল্লোড় করে উৎসবকে উপভোগ করেছেন। উৎসবটি উপভোগ করতে গ্রামের পুরুষ, মহিলা, শিশু, কিশোর, কিশোরী ও শিশুরাসহ সবাই বিলের পাড়ে উল্লাস করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জব্বার মিয়া জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা প্রায় ১৫০ বছর ধরে এ উৎসব পালন করে আসছেন। তাই তারা প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে উৎসব পালন করে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছেন। এই উৎসবে যোগ দিতে প্রতি বছর প্রবাসীরাও এলাকায় আসেন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছাদিক হোসাইন বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পলো-বাওয়া উৎসব প্রতি বছর উৎসবের মতো পালন করা হয়। এতে সব বয়সি মানুষ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম হোসেন বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা পলো-বাওয়া উৎসব পালন করতেন। তাদের ধারাবাহিকতায় এখন চলছে পলো-বাওয়া উৎসব। এই ধারা অব্যাহত রাখতে গ্রামবাসী সব সময় পলো-বাওয়া উৎসবের আয়োজন করেন।
"