মিনহাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন
ছড়াচ্ছে উত্তাপ, বাড়ছে শঙ্কা পাল্টাপাল্টি ১৮ অভিযোগ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। প্রচারণার পাশাপাশি ঘটছে সহিংসতার ঘটনা। একই সঙ্গে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। এ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে শঙ্কা।
নগরীতেই দিন-রাত সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, বিএনপির প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একের পর এক অভিযোগ নিয়ে রিটার্নিং কার্যালয় যাচ্ছেন। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বলে পরিচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের পাল্লাই ভারী। গত আট দিনে অন্তত ১৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে রিটার্নিং কার্যালয়ে।
রিটার্নিং কার্যালয় বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও থানা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিদিনের সংবাদকে জানান রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
এদিকে নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনকে ঘিরে নগরে ততই বাড়ছে সহিংসতা। প্রচারণাকালে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেওয়ানবাজার এলাকায় গত ৮ জানুয়ারি নির্বাচনী প্রচারণার সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আশিকুর রহমান রোহিত (২০) নামের এক ছাত্রলীগের কর্মীর মৃত্যু হয়। গত মঙ্গলবার পাঠানটুলীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। গত সোমবার বাকলিয়ার বাস্তুহারা ও চান্দগাঁও থানার বারইপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ অবস্থায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রচারণা শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ সমাধান করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দুটি অভিযোগ করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। শাহাদাতের পক্ষে চট্টগ্রাম নাগরিক ঐক্য পরিষদ এই অভিযোগ করেন। ডা. শাহাদাতের বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তার পক্ষে নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের এই অভিযোগ করেন। এছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে জানা গেছে, একাধিক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের (আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থী) মধ্যে দ্বন্দ্ব-উত্তেজনা বিরাজ করছে। বেশির ভাগ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব রয়েছে। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রের জানা গেছে, নগরীর ১ নম্বর পাহাড়তলি, ২ নম্বর জালালাবাদ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৯ নম্বর পাহাড়তলি, ১০ নম্বর কাট্টলি, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৪ নম্বর লালখানবাজার, ২৩ নম্বর পাঠানটুলি, ২৭ নম্বর উত্তর হালিশহর, ২৮ নম্বর মোগলটুলি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নগরজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচনে এসব ওয়ার্ডে সহিংসতা বাড়তে পারে। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ শঙ্কিত।
চসিক নির্বাচনে ঘিরে আইন শৃঙ্খলার রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি জানান, নগরজুড়ে চেকপোস্ট ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে এবং নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ বিশেষ টহল চলবে। পুলিশের ‘মুভমেন্ট’ বাড়ানোর হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সেজন্যই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রচার প্রচারণায় আচরণবিধি মানছেন না প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। নির্ধারিত সময়ের বাইরে মাইক বাজানো, প্রচারে মিছিল-শোভাযাত্রাসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ চলে আসছে। কিন্তু আচরণবিধি দেখভালের দায়িত্বে মাঠে থাকা ১৪ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ ভোটারা।
অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনার পর সব রকমের প্রস্তুতি নতুনভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা কঠোর নজরদারি করছি। এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে প্রতিটি ওয়ার্ডে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছি।
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৫ অভিযোগের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে নির্ধারিত ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৪ হাজার ৮৮৬টি কক্ষে ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করবেন ৭৩৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং কর্মকর্তা।
"