
মো. শাহ আলম, খুলনা
২৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
খুলনা উপকূল জুড়ে নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা
অনিশ্চয়তায় শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা

------
ওই গ্রুপের সদস্য শিক্ষার্থী সৌরভ বিশ্বাসের বাড়ি দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামে। তিনি চায়না জিংগাজ্ঞানসাং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে চীনা থেকে জানুয়ারিতে গ্রামে চলে আসেন। মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যার কথা তুলে ধরে সৌরভ বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন ক্লাস চলছে অনলাইনে, তবে দেশে এসে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছি। ক্লাস করার সময় ল্যাপটপে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। বিকল্প কোনো ধরনের সুবিধা না থাকায় মোবাইল ডেটা ব্যবহারই একমাত্র ভরসা। তিনি বলেন, ক্লাস শুরু হলে ল্যাপটপ ও মোবাইল ডিভাইস নিয়ে রাস্তার পাশে বা উঁচু কোনো জায়গা খুঁজে বসে পড়াশোনা করতে হয়।
সুতারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাজিরা খাতুন জানান, মোবাইল হাতে ধরে বসে থাকতে হয়। সঠিকভাবে কোথাও মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। ফলে ক্লাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে অনেক সময় বাদ পড়ে যাচ্ছি। দুর্ভোগে পড়তে হয় সবসময়।
উপকূলীয় বাজুয়া গ্রামের সরোজিৎ ম-ল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসায়িক কাজে অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। কিন্তু এ অঞ্চলে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা খুবই নাজুক। মোবাইলের মাধ্যমে কথা বলতে গেলে সবচেয়ে বিরক্ত হতে হয়।
চুনকুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায় বলেন, নিজের বাড়ি হরিণটানা গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বাজুয়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদান করাতে হয়। অনেক সময় অনলাইনে শিক্ষাভিত্তিক আলোচনা থাকে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে বেশির ভাগ সময় বিষয়ভিত্তিক আলোচনা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তিনি আরো বলেন, করোনাকালে শিক্ষার্থীরা যাতে না ঝরে পড়ে, সেক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা খুবই কার্যকরী। তবে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণে গতিশীল মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা জরুরি।
জানতে চাইলে গ্রুপটির ফোকাল পার্সন অসীম ঘরামী বলেন, আমরা মূলত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করি। তারই অংশ হিসেবে করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইনমাধ্যমে ক্লাস ও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক।
তিনি আরো বলেন, উপকূলজুড়ে গতিশীল মোবাইল টাওয়ার না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে নানা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। এজন্য প্রথমে আমরা আলোচনা করে অনলাইনভিত্তিক একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছি। আমাদের দাবি, অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার আগে প্রযুক্তিব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে উপকূলের শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির মাধ্যমে সব কাজে অংশ নিতে পারবেন।
শিক্ষাবিদদের ধারণা, উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য রয়েছে বেসরকারি মোবাইল টাওয়ার। কিন্তু সেগুলো পর্যাপ্ত গতিসম্পন্ন নয়। টাওয়ারগুলো গতিশীল করতে পারলে করোনাকালে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
তারা বলছেন, শহরের সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা এমনিতেই পড়াশোনায় এগিয়ে থাকে। করোনা পরিস্থিতিতে তারা ক্লাস ও পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে অনলাইনে। শহর ও গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ পাচ্ছে না। সরকার গত ২৯ মার্চ থেকে মাধ্যমিকের এবং ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের রেকর্ড করা ক্লাস সংসদ টেলিভিশনে প্রচার করছে। কিন্তু টেলিভিশনের ক্লাস খুব একটা কার্যকর নয়।
"