প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

দফায় দফায় বন্যা

চাষির চোখে শর্ষে ফুল

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে দেশের সাতটি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে ধরলা কুড়িগ্রামে ২১ সেমি, যমুনাশ্বরী বদরগঞ্জে ৭৭ সেমি, করতোয়া চক রহিমপুর ৭৭ সেমি, যমুনা সারিয়াকান্দিতে ০৮ সেমি, গুর নদী সিংড়াতে ৯০ সেমি, ছোট যমুনা নওগাঁতে ০৪ সেমি, আত্রাই মহাদেবপুর ও আত্রাইয়ে যথাক্রমে ২৭ সেমি ও ৫৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দফায় দফায় বন্যায় বিপাকে জামালপুরের মাদারগঞ্জের কৃষক। এদিকে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বন্যায় ৬১০ হেক্টর জমির ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পৌরসভাসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নওগাঁর মান্দা উপজেলার কয়লাবাড়ি এবং আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ হাটের উত্তরে মান্দা-সিংড়া বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। আর আত্রাইয়ের একটি সড়ক ভেঙে পানি ঢুকে রানীনগর ও মান্দা এবং রাজশাহীর বাগমারা নাটোরের নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলার প্রায় ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট

মাদারগঞ্জ (জামালপুর) : জামালপুরের মাদারগঞ্জে দফায় দফায় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন ধান রোপণ করে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। চতুর্থ দফা বন্যায় তলিয়ে গেছে কয়েকশত হেক্টর আমন ধান। প্লাবিত হয়েছে নি¤œাঞ্চল, ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন ভরা মুলা, কুমড়া, বেগুন, শসা, মরিচ, পাটশাকসহ শীতের আগাম সবজির জমি।

এর আগের দফায় বন্যার পানি কমলে আমন রোপণ শুরু করে কৃষক। শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ, শ্রমিক মজুরি ও চড়া দামে চারা কিনে আবাদ শুরু করেন তারা। মাসের ব্যবধানেই ফসলি মাঠ হয়ে ওঠে সবুজের সমরোহ। কৃষকরা আমন খেতের আগাছা দমন, সার-কীটনাশক প্রয়োগে যখন ব্যস্ত সময় পার করছেন, ঠিক চতুর্থ দফা বন্যায় আমন খেত তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছিল ১৩ হেক্টরের কিছু বেশি।

উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামের কৃষক আ. কদ্দুস, গেন্দা, খলিল, জোনাইল গ্রামের কৃষক আজ্জি মিয়া, সাবের আলীসহ কয়েকজন কৃষক জানান, ভারী বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের আমন খেত। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুযুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি ও বন্যায় নি¤œাঞ্চলের আমন খেত তলিয়ে গেছে। পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ২৮ হাজার ১৯৩ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০ হেক্টর জমির আমন ফসল ও ৬০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে সেখানকার কৃষি অফিস। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, সোমবার বিকেলে তিস্তার পানি কমেছে তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে তা স্থির রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার আদর্শ স্কুলের দুই পাশে, মীরগঞ্জ বাজারের পূর্বপাশে, বামনজল হলহলিয়াসহ চরাঞ্চলের নিচু জমির আমন ধান খেত পানিতে পুরোটাই নিমজ্জিত। এ সময়ে আমন ধান কাইচ থোর। এ অবস্থায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অফিস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে তারাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেগুন ও অন্যান্য সবজির খেত বৃষ্টি এবং প্রচন্ড রোদে ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছে চাষি।

আত্রাই (নওগাঁ) : নওগাঁর ছোট যমুনা বিপৎসীমার ২৭ সেমির ওপর দিয়ে ও আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেমি ওপর দিয়ে বইছে। মান্দা উপজেলার কয়লাবাড়ি এবং আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ হাটের উত্তরে মান্দা-সিংড়া বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হচ্ছে। দফায় দফায় বন্যার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। বাঁধ তৈরি, নদী খনন এবং স্লুইচগেট নির্মাণ ও মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় প্রতি বছরই লাখ লাখ মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে বানভাসিদের অভিযোগ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আত্রাই নদীর ৪টি পয়েন্টে, আত্রাই উপজেলায় ১টি সড়ক ভেঙ্গে নওগাঁ জেলার আত্রাই, রানীনগর ও মান্দা এবং রাজশাহীর বাগমাড়া নাটোরের নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলার প্রায় ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ছয় উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের প্রায় তিন লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি। এসব এলাকার প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের বিপুল অর্থের মাছ। বানভাসিরা উঁচু স্থানে, সড়ক, বেড়িবাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ নৌকায়, চকি বা খাট উঁচু করে অনেকে ঘরের মধ্যেই থাকছেন। বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও গবাদি পশুর খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছানাউল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক অবস্থায় শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ওই নদীর পানি উপচে পৌরসভাসহ তীরবর্তী ১০টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের খেত প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে পানি ঢুকেছে। কাইয়াগঞ্জ এলাকায় গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপরে পানি উঠে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত করতোয়ার পানি কাটাখালী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৯ সেমি ওপর দিয়ে বইছে। এতে উপজেলার রাখালবুরুজ, নাকাই, হরিরামপুর, মহিমাগঞ্জ, ফুলবাড়ি, দরবস্ত, শালমারা, কাটাবাড়ি ও সাপমারা ইউনিয়ন এবং পৌরসভার কিছু অংশসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদের পশ্চিম পার্শ্বে বিআরডিবি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, প্রাণিসম্পদ অফিস, পল্লী উন্নয়ন অফিস ও একটি আবাসিক কোয়ার্টারসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বর বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার খালেদুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ৮৫০ হেক্টর আমন, ৪০ হেক্টর শাকসবজি ও ১০ হেক্টর মাসকলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসার ইমরান হোসেন চৌধুরী জানান, বন্যার পানিতে ১০ হেক্টর পুকুর ও জলাশয় তলিয়ে গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া প্রায় ৫০/৬০টি পরিবার তাদের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ও আসবাবপত্র নিয়ে গোলাপবাগ মাদ্রাসা, কুঠিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মন জানান, বন্যার্ত মানুষের সহায়তার জন্য সরকারিভাবে ৫ মে.টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

চাটমোহর (পাবনা) : পাবনার চাটমোহরের নিম্নাঞ্চলের আমন ধান ও সবজি খেত ডুবে গেছে। সবজি খেত নষ্ট হওয়ায় বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুমবিল্লাহ ও মনিরুল ইসলাম, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৩ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চাটমোহরের বড়বেলাই, হাসুপুর, হোসেনপুর, বেলঘড়িয়া, বাঘলবাড়ি ও দরাপপুর গ্রামের ধান চাষিরা জানান, তাদের বার বার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ধুলিস্যাৎ হচ্ছে। বন্যা ও বৃষ্টি তাদের পিছু ছাড়ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close