এম আর অভি, বরগুনা
বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলা
পলাতক আসামি মুছা বন্ডের অনুপস্থিতিতে রায় কাল
বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত অন্যতম আসামি মুছা বন্ডকে ১৫ মাসেও আটক করতে পারেনি পুলিশ। এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ২৪ আসামির মধ্যে ৮ আসামি কারাগারে আছেন। প্রথমে প্রধান সাক্ষী ও পরে আসামি নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জামিনে আছে তার আইনজীবীর জিম্মায়। তবে এ মামলার অন্যতম প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মুছা বন্ড এখনও পলাতক। রিফাত শরীফ হত্যার মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মুছা বন্ডের অনুপস্থিতিতেই প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় হবে আগামীকাল বুধবার। রিফাত হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামিরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুন।
এ আলোচিত মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বুধবার। বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায়ের তারিখ ঘোষণা করেছেন। আলোচিত এই হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর বিচারক এ রায়ের দিন ধার্য করেন। অন্যদিকে এই মামলায় সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নির জামিন জেলা ও দায়রা জজ আদালত বহাল রেখেছেন।
অন্যদিকে আগামী ২৯ সেপ্টম্বর রিফাত হত্যা মামলার আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ শিশুর ৩৪২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করবেন বিজ্ঞ আদালত । এর পূর্বে (৮ জানুয়ারি) রিফাত হত্যা মামলার আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ শিশুর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। বরগুনা শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ চার্জ গঠন করেন।
রিফাত হত্যা মামলার আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ শিশুরা হলেন রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী (১৭) মো. ওলিউল্লাহ অলি (১৬), জয় চন্দ্র সরকার চন্দন (১৭), রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো. নাইম (১৭), মো. তানভীর হোসেন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ (১৭), মারুফ মল্লিক (১৭), প্রিন্স মোল্লা (১৫), রাতুল সিকদার জয় (১৬), আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান (১৬) ও আরিয়ান শ্রাবণ (১৫)।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের প্রতিবেদকে জানান, এ মামলায় দুই ভাগে (প্রাপ্ত-অপ্রাপ্তবয়স্ক) ২ ভাগে বিভক্ত ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। ২৯ সেপ্টম্বর রিফাত হত্যা মামলার আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ শিশুর ৩৪২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করবেন আদালত। রাষ্ট্র পক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট ভূবন চন্দ্র হালদার জানান, আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি খন্ডন করার নির্ধারিত তারিখে আমরা আদালতে বক্তব্যে রেখেছি। মামলায় অভিযুক্ত কোনো আসামি নির্দোষ নয় এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে মামলার অন্যতম আসামি নিহত রিফাতের স্ত্রী জামিনে থাকায় তার নিয়োজিত আইনজীবীর জিম্মায় মিন্নির জামিন জেলা ও দায়রা জজ আদালত বহাল রেখেছেন। রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার সময় জামিনে থাকা রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ কারাগারে থাকা ৮ আসামিসহ ৯ আসামি আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। মামলার অপর আসামি মুসাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গত (১ জানুয়ারি) চার্জ গঠন করা হয়। ৮ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়ে ৭৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ দিকে (৬ সেপ্টেম্বর) রোববার মিন্নির যুক্তিতর্কের মাধ্যমে যুক্তিতর্ক শেষ হয়। মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের যুক্তি তুলে ধরতে ঢাকা থেকে বরগুনা আসেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক হোসেন। ওই বছরের (১ সেপ্টেম্বর) রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে (প্রাপ্ত-অপ্রাপ্তবয়স্ক) বিভক্ত অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। একই সঙ্গে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। তাছাড়া এ মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক রয়েছেন এবং নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ অপ্রাপ্তবয়স্ক ৮ আসামি উচ্চ আদালত এবং বরগুনা শিশু আদালতের আদেশে জামিনে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মূলগেটে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির উপস্থিতিতে নয়ন বন্ড, রিফাত ও রিশান ফরাজীসহ কয়েক যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। রিফাত শরীফকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে তারা চলে যায়। রিফাতকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ পরের দিন ২৭জুন বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
"