প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ইউক্যালিপটাস গাছ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

আশির দশকে সরকারিভাবে ইউক্যালিপটাস গাছ কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হতো। অল্প সময়ে বড় হয় ও দ্রুত কাঠ বিক্রি করে লাভ করা যায় বলে চাষিরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েন। গবেষণা না হলেও এর ক্ষতির দিক নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত পরিবেশবিদরা। সম্প্রতি সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে ক্রমেই বাড়তে থাকা ইউক্যালিপটাস গাছের জায়গায় প্রচলিত ফলদ গাছ রোপণের পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলছেন, ইউক্যালিপটাসের জায়গায় কাঁঠাল, জাম, নিম বা এ ধরনের গাছ রোপণ করা যায়। কিন্তু এ পরামর্শের পরও ইউক্যালিপটাসের বিস্তার থামছে না।

কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সদস্য গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, ‘মুজিববর্ষ পালনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চলছে। কৃষিমন্ত্রী নিজেই ইউক্যালিপটাস নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেন। সংসদীয় কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এলাকায় ইউক্যালিপটাস কেটে কাঁঠাল, জাম ও নিমগাছ রোপণের সুপারিশ করা হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে ইউক্যালিপটাসের সংখ্যা কত বা এগুলোর প্রভাবে কী হচ্ছে, তার কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই বনবিভাগের বা পরিবেশ বিভাগের। কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত আশির দশকে সরকারিভাবে ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি ও পাইনের মতো বিদেশি গাছগুলো বাংলাদেশে আনা হয়। বিনামূল্যে বিতরণও করা হয়। ২০০৮ সালে এক প্রজ্ঞাপনে ইউক্যালিপটাসের চারা উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং এরপর বনবিভাগও এর উৎপাদন বন্ধ করার নীতি গ্রহণ করে।

রংপুরের সামাজিক বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, অনেক আগে সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে প্রতি কিলোমিটারে ১ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছিল। প্রতি কিলোমিটারে সুবিধাভোগী ছিল পাঁচজন। দ্রুত অর্থনৈতিক লাভের চিন্তা থেকে তখন এটা করা হয়েছিল।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, তেমন কোনো গবেষণা না থাকায় গাছটির বিস্তারিত ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তথ্য নেই। তবে এটি যে আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

ফলদগাছ রোপণের ক্যাম্পেইন করে ‘ফলদ বাংলাদেশ’। এর সংগঠক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, উত্তরবঙ্গে অনেকে ইউক্যালিপটাসের বাগান করেছেন। তারা মনে করেন, দ্রুত লাভের জন্য এটা ভালো। তাদের বুঝিয়েছি, এর চেয়ে ফলদগাছে লাভ বেশি। অনেকে তাতে উদ্বুদ্ধও হয়েছেন। উত্তরবঙ্গের নার্সারিগুলোতে হরদম এটি বিক্রি হচ্ছে ফলদগাছের চেয়ে কম দামে।

সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘ক্ষতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক গবেষণা না হলেও পরিবেশ নিয়ে যারা জ্ঞান রাখেন, তারা জানেন ইউক্যালিপটাস প্রচুর পানি শোষণ করে। তাছাড়া এক অঞ্চলের গাছ অন্য অঞ্চলে হলে জৈববৈচিত্র্যের জন্য তা ভালো হয় না। এই গাছের পাতায় পেট্রলিয়াম জাতীয় পদার্থ আছে।

উত্তরবঙ্গের মানুষের যুক্তি, ‘গাছটিতে বেশি যত্ন লাগে না আর ছাগলেও খায় না।’ রংপুরের সামাজিক বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘বনবিভাগ থেকে আগেই এটি বন্ধ করেছি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে। ইউক্যালিপটাসের ব্যাপক উপস্থিতি ও বিস্তারের প্রবণতার মধ্যেও উত্তরাঞ্চলে শস্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং একই সঙ্গে আম, লিচুর মতো ফলের উৎপাদনও ব্যাপক বেড়েছে।

তবে রংপুরে পরিবেশ অধিদফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর মেজবাউল আলম বলছেন, লোকাল ভ্যারাইটিকে ক্ষতির মুখে ফেলে এ গাছ। এটি আমাদের ইকো সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর। তবে যেহেতু কোনো আইন নেই বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি, তাই এর বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার পরিবেশ অধিদফতরের নেই।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কী বলছে

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এলাকায় ইউক্যালিপটাস গাছটির প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি বলে জানান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন চৌধুরী। কৃষকরা বলেছেন, গাছটি আমরা চিনতাম না। সরকারের লোকজনই চিনিয়েছে। আর দ্রুত কাঠ হিসেবে বিক্রি করা যায় এবং বিক্রয়মূল্য ভালো। কাঠের মানও ভালো। ফলে আয় হয় ভালো।

আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, গাছটিতে প্রচুর পানির দরকার হয়। এমনিতেই বরেন্দ্র এলাকায় বিপুল পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে হয় সেচের জন্য, তার মধ্যে আবার এই বিপুলসংখ্যক ইউক্যালিপটাস প্রতিনিয়ত পানি শোষণ করছে।

‘কিছু লাভ হলেও এটি আসলে ক্ষতিকর। পানি ব্যবস্থাপনার জন্য সমস্যা তৈরি করছে। সূত্র : বিবিসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close