প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

চতুর্থ দফার বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি

বাড়ছে মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীর পানি

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর রোপা আমনখেত। কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও, ধরলা এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। সেখানেও ক্ষতির শীর্ষে রযেছে আমন ধান। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে পঞ্চম দফায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার হেক্টর রোপা আমনখেত। ঋণের টাকায় আবাদ করে লোকসানে পড়েছে দুই উপজেলার হাজারো কৃষক। এদিকে আকস্মিক বন্যায় জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্ন অঞ্চলের হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

কুড়িগ্রাম ও রাজারহাট প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করছে। চতুর্থ দফার এ স্বল্পমেয়াদি বন্যায় ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরদোর, আমন ও সবজিখেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এখনো ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। জেলার সদর উপজেলায় ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র, নাগেশ্বরীতে দুধকুমার, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুরে ব্রহ্মপুত্র এবং উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার ভাঙনে ফসলি জমি হারানোর পাশাপাশি বসতভিটা হারাচ্ছেন নদী অববাহিকার বাসিন্দারা। গত কয়েক সপ্তাহে উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, বজরা ও থেতরাই ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনে পাকা সড়ক, ফসলি জমি ও মসজিদসহ ভিটেমাটি হারিয়েছেন শতাধিক পরিবার। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আরো শতাধিক পরিবারসহ সড়ক ও ফসলি জমি। বাস্তহারাদের পুনর্বাসনে এখনো কোনো সহায়তা করা হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, নদীভাঙনে ভিটেহারাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ামাত্র ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে। তবে দুর্গতদের খাদ্য সহায়তা চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে রোপণ করা ১৩৫ হেক্টর জমির রোপণ করা আমন ধান তলিয়ে গেছে। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের আমন ধান চাষি চতুরা গ্রামের রেজু মিয়া মনশ্বর গ্রামের রতন সরকার, পাড়ামৌলা গ্রামের শরিফুল মিয়া জানান, বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পেয়েছিলাম। সেই আশায় বন্যায় বীজের তলা নষ্ট হওয়ার পরেও অধিক দামে চারা কিনে ফের অধিক জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলাম।

বিদ্যানন্দ ইউপি চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম এবং নাজিম খান ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মালেক পাটোয়ারি নয়া জানান, কৃষকরা বেশি দামে আমন চারা কিনে রোপণ করেছিলেন। ফের বন্যা এসে ফসল পানিতে তলিয়ে নিচ্ছে। কৃষকরা খুব দুশ্চিন্তায় আছেন।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. শম্পা আক্তার বলেন, এ বছর উপজেলায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমনের বাম্পার ফলন হবে।

গতকাল বন্যা পূর্বাভাষ ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে, ব্রহ্মপুত্র যমুনা এবং পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত পারে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, দেশের ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০টির, হ্রাস পেয়েছে ৩৬টির, অপরিবর্তিত রয়েছে পাঁচটির, বিপৎসীমার ওপরে স্টেশনের সংখ্যা পাঁচটি এবং বিপৎসীমার উপরে নদীর সংখ্যা পাঁচটি।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্নস্থানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে জাফলং ১৩০ মিলিমিটার, ঠাকুরগাঁও ১১০ মিলিমিটার, পঞ্চগড় ১০৯ মিলিমিটার, ডালিয়া ৯৬ মিলিমিটার, লালাখাল ৮০ মিলিমিটার, দিনাজপুর ৭১ মিলিমিটার ও ভৈরব বাজার ৭০ মিলিমিটার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close