নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে আ.লীগে অনুপ্রবেশের সুযোগ নয় : কাদের

সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যাতে আওয়ামী লীগে জায়গা না পায়, সেজন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের সভাপতিমন্ডলীর সভায় দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। হঠাৎ করে কেউ দলে এলে তাকে প্রথমেই নেতা বানানো যাবে না। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোনো অবস্থাতেই অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না।’

গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলী, দলের ঢাকা মহানগর শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সব বাধাবিপত্তি ডিঙিয়ে পথচলাই এ দেশের মানুষের চিরায়ত রীতি উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জীবনের সঙ্গে জীবিকার চাকা সচল হয়েছে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সীমিত পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড শুরু করেছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে-পরে ৩১টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। করোনা সংক্রমণের বাস্তব কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে অধিকাংশ পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় দফতরে জমা পড়েছে।’

দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই, কমিটি গঠনে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় নেতৃত্বে নির্দেশনা দিয়েছেন। তা মেনেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোনো অবস্থাতেই অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না। বিষয়টি আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি: আপনারা যারা কমিটি করেছেন বা করবেন, তাদের এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।’

আসন্ন সাংগঠনিক সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আটটি বিভাগের জন্য আটটি টিম, সাংগঠনিকভাবে আমরা প্রস্তুত, নেত্রীর কাছে তালিকা জমা দিয়েছি। অনুমোদন দিলে এই টিমগুলো আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি সর্বদা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কর্মসূচি পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।’

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওই সম্মেলনের পরে আমাদের সামনে ছিল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আমরা অনেকটা গৃহবন্দি ছিলাম। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আমরা শতবার্ষিকীর কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করতে হয়েছে।’

১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ দেওয়ার ঘটনা স্মরণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে সারা দুনিয়ার সব বাঙালিকে ধন্য করেন। গৌরবান্বিত করেন। করোনার সংকটের কারণে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে বাংলা ভাষণ দেওয়ার দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘অদৃশ্য করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেশের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস ছিল উল্লেখ করার মতো। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সারা দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছে এবং করোনাকালে তিনি একমাত্র ট্রাস্টেড সিঙ্গেল ফেস হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মানুষের কষ্ট লাঘবে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনা মোকাবিলায় সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণকালে প্রধানমন্ত্রীর সুনিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সুনিপুণ ব্যবস্থাপনায় মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে অন্যান্য দেশের চেয়ে আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক সক্ষম হয়েছি। তিনি দক্ষ নাবিকের মতো দিশাহারা জনগোষ্ঠীকে সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে পথ দেখিয়েছেন। দেশের মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা লাঘবে ৭৩ বছর পেরিয়েও তিনি অবিরাম ছুটে বেড়িয়েছেন। এ বয়সেও তার গতি অ্যারাবিয়ান হর্স-এর মতো।’

২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জন্মদিনে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বঙ্গবন্ধুকন্যার পছন্দ নয়। জন্মদিবস পালনে নেত্রী তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এটা পালন করতেও চান না। তার পরও আমাদের এটা দায়িত্ব। শেখ হাসিনার জন্মদিন বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বঙ্গবন্ধু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার রোল মডেল। হাসিনা আমাদের উন্নয়ন এবং অর্জনের রোল মডেল। বিশ্বদরবারে তিনি বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তার জন্মদিন পালন না করলে আমরা জাতির কাছে অকৃতজ্ঞ থেকে যাব।’

এ সময় ওবায়দুল কাদের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ দিনটি উপলক্ষে সারা দেশের সব মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা-গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা এবং সীমিত পরিসরে আলোচনা সভার আয়োজন করবে।

২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখানে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত হতে হবে। একটি সিট ফাঁকা রেখে অন্য আরেকটি সিটে বসতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বেশি জনসমাগম করা যাবে না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close