উবায়দুল হক, ময়মনসিংহ (মহনগর)

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

দেশের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন

উদ্বোধন শিগগিরই খরচ ৮০০ কোটি টাকা

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সম্পন্ন হয়েছে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে স্থাপিত দেশের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কাজ। শিগগিরই এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরপরই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এজন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে বৃহৎ প্রকল্পটি দেশের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি মাইলস্টোন হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির তোড়জোড়।

জানা যায়, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ‘সুতিয়াখালী ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প’টির বাস্তবায়িত হচ্ছে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগে। এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লিমিটেড প্রকল্পটিকে ঘিরে নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

সরকারি তদারকির পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চরাঞ্চল সুতিয়াখালীতে ১৭৪ একর জমির ওপর ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব এ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে ব্যবহৃত বিদ্যুতের শতকরা ১০ ভাগ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৪ সালে কাগজে-কলমে প্রকল্পের যাত্রা শুরুর কথা বলা হয়। তবে অনেক চড়াই-উৎরাই শেষে ২০১৬ সালের শেষ দিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ‘বাস্তবায়ন চুক্তি’ এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ‘বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি’ স্বাক্ষরের পর ২০১৭ সালে ‘সুতিয়াখালী ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প’ নামে বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ বাড়ানোর পর গত ৩০ জুনের মধ্যেই উৎপাদন শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের কাজে জড়িত চীনা প্রকৌশলীরা নববর্ষের ছুটিতে দেশে যাওয়ায় পর করোনা দুর্যোগের কারণে সময়মতো ফিরে না আসায় সোলার প্লেট বসানো ও সংযোগ প্রদানের কাজ বিলম্বিত হয়। এছাড়া স্থানীয় কিছু ব্যক্তি আর কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রকল্পের কাজে বিঘেœর সৃষ্টি করে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপের ফলে সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। প্রকল্প পরিচালক ও পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ জানান, এরই মধ্যে প্রকল্পের অধীনে অফিস ভবন, ব্রহ্মপুত্রের নদী শাসন বাঁধ, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সোলার প্লেট বসানো, ১০টি বক্স ট্রান্সমিশনে সংযোগ প্রদান, সাবস্টেশনসহ ১৩২ কেভিএ ট্রান্সমিশন টাওয়ার নির্মাণ, কেওয়াটখালীস্থ জাতীয় গ্রিড লাইন পর্যন্ত চার কিলোমিটার আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন এবং এক কিলোমিটার ওভারহেড ট্রান্সমিশন সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ইকুইপমেন্ট টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের পর পরীক্ষামূলক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু এবং গ্রিডে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে বলে জানান তিনি।

এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ মো. শফিকুল ইসলাম পিএসসি জানান, দেশে চলমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সরকারের সব নিয়মনীতি অনুসরণ করে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। করোনা মহামারি না থাকলে আরো ৬ মাস আগেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হতো। আশা করছি শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close