নিজস্ব প্রতিবেদক
সৌদি যাওয়ার টিকিট না পেয়ে বিক্ষোভ
ছুটি শেষে মার্চের ২০ তারিখ সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল মাসুদুর রহমানের। করোনা মহামারির কারণে সৌদি আরব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়ায় কর্মস্থলে ফেরা হয়নি তার। ৩০ সেপ্টেম্বর ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, দুই দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়েও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের টিকিট কাটতে পারেননি তিনি। অনিশ্চয়তায় মধ্যে দিন কাটছে মাসুদুর রহমানের। তার মতো অনেকেই টিকিটের জন্য দিনভর অপেক্ষা করেছেন সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস সাউদিয়ার অফিসে। টিকিট না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন ছুটিতে আসা সৌদি প্রবাসীরা।
জানা গেছে, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস বাংলাদেশে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পায়। অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গত সপ্তাহে আবেদন করলেও বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে বিমানকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন না দিলে সাউদিয়ার অনুমোদন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্তের খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন সৌদি প্রবাসীরা। গত সোমবার এর প্রতিবাদে মতিঝিলে বিমান অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। কেউ কেউ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন।
সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের অফিসে শনিবার থেকেই টিকিটের জন্য ঘুরছেন প্রবাসীরা। তাদের অভিযোগ, লাইনে দাঁড়ালেও টিকিট দিচ্ছে না সাউদিয়া। রিটার্ন টিকিট থাকার পরও অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা রিইস্যু করতে নিচ্ছে এয়ারলাইনসটি। একইসঙ্গে টিকিট বিক্রি করছে ৯৫ হাজার টাকায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজধানীর কাওরানবাজারে সোনারগাঁও হোটেলে সাউদিয়ার অফিসের সামনেও বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা।
জহিরুল আলম নামের এক প্রবাসী বলেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পৌঁছাতে না পারলে অনেকেই বেকার হয়ে পড়বেন। অথচ আমরা টিকিট পাচ্ছি না লাইনে দাঁড়িয়েও। সৌদি এয়ারলাইনস লাইনে আসা প্রবাসীদের দাঁড় করে রেখে গোপনে বাইরে টিকিট বিক্রি করে দিচ্ছে।
রিটার্ন টিকিট রিইস্যু করতে ২৫ হাজার টাকা নেওয়ায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে আবদুস সালাম বলেন, আমাদের টিকিট আগেই কাটা, এখন রিইস্যু করতে কেন এত টাকা নেবে? এটা অন্যায়।
তবে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ১ অক্টোবর থেকে সৌদি আরবের তিনটি শহরে আটটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। যাদের রিটার্ন টিকিট আছে তাদের আগে রিইস্যু করা হবে, আপাতত নতুন টিকিট বিক্রি করবে না বিমান।
এ প্রসঙ্গে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন বলেন, সৌদি আরব ১ অক্টোবর থেকে বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। আসন বরাদ্দ আরম্ভ করার আগে ল্যান্ডিং পারমিশন আবশ্যক। কিন্তু ল্যান্ডিং পারমিশন পাওয়া যায়নি। ফলে যাত্রীদের আসন বরাদ্দ আরম্ভ করার জন্য ফ্লাইট এখনই ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না। ল্যান্ডিং পারমিশন প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাইট ঘোষণা করা হবে এবং যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হবে। ফ্লাইট ঘোষণার আগে কাউন্টারে অহেতুক ভিড় না করার জন্য যাত্রীদের বিনীত অনুরোধ করছি।
এদিকে সৌদি আরবের বিমান টিকিটের দাবিতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত সৌদি এয়ারলাইনস কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভের পর এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন বিক্ষোভকারীরা। একই সময় রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কার্যালয়ও অবরুদ্ধ করেন তারা। এসময় সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য বিমান টিকিটের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে কাওরানবাজারে সৌদি এয়ারলাইনস কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে কয়েকশ’ টিকিটপ্রত্যাশী বিক্ষোভ করতে থাকেন। এই সময় ঢাকার প্রধান সড়কটির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের অনেকে জানান, চলতি মাসের মধ্যে সৌদি আরবে যেতে না পারলে তাদের চাকরি হারাতে হবে। আবার অনেকে বলছেন, তাদের ভিসার মেয়াদ চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাবে। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমার স্পন্সর বলছে, যেভাবে পারো ৩০ তারিখের মধ্যে সৌদি আরব আসো। না হলে আর আসতে পারবা না। কিন্তু টিকিট তো পাই না।’ তেজগাঁও থানার ওসি মো. সালাহ উদ্দিন মিয়া জানান, তারা টিকিটপ্রত্যাশীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করে ঢাকার সৌদি এয়ারলাইনসের প্রধান টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের সামনের সড়কে টিকিটপ্রত্যাশী শত শত শ্রমিক ভিড় করতে থাকেন। মূলত তারা সৌদি আরবে আগে থেকেই কাজ করতেন কিন্তু দেশে এসে করোনা পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আটকা পড়েন। তাদের মধ্যে নতুন শ্রমিক, যাদের সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ভিসা, নিয়োগপত্রসহ সব কিছু প্রস্তুত, এমন শ্রমিকও রয়েছেন।
বাংলাদেশের সরকারি বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও সৌদি সরকারের শর্তসাপেক্ষে ফ্লাইট আংশিকভাবে চালু করতে চেয়েছিল। কিন্তু সৌদি আরবের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সেই অনুমতি বাংলাদেশ বিমানকে দেয়নি। এরপর বাংলাদেশও সৌদি এয়ারের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি বাতিল করে দেয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, অক্টোবরের এক তারিখ থেকে বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইনস ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তবে যে যাত্রীর কাছে সৌদি আরব যাওয়ার ফিরতি টিকিট রয়েছে কেবল তাদের আসন বরাদ্দ করা হবে।
সৌদি যেতে প্রবাসীদের যত ফ্লাইট লাগে অনুমোদন দেবে বেবিচক : সামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেছেন, এত দিন সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের আকাশ পথে যোগাযোগ পুরাপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল। মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশই ফ্লাইট শুরু করেছে। আমরা চাচ্ছিলাম সৌদি আরব থেকেও ফ্লাইট শুরু হোক। তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ফিরে যেতে সাউদিয়া যে কয়টা ফ্লাইটের অনুমোদন চাইবে, আমরা দেব। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গণশুনানি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মফিদুর রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ আগে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইনস আমাদের কাছে অনুমোদন চায়, আমরা অনুমতি দিয়েছি। যদিও আমাদের বাংলাদেশি এয়ারলাইনসও সেদেশে যেতে পারবে এই শর্তে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি, যাদের আকামার মেয়াদ আছে তারা যেতে পারবেন। শুধু ভিজিট ভিসা ও ওমরা ভিসায় যাওয়া যাবে না।
আমরা জানতে পারলাম, বিমানকে চার্টার্ড ফ্লাইটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ফ্লাইটের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিমানকে অনুমোদন না দেওয়ায় অনেকেই চাচ্ছিলেন সাউদিয়ার অনুমোদন বাতিল করা হোক, কিন্তু আমরা সিভিল এভিয়েশন থেকে বাতিল করিনি। আমাদের বাংলাদেশি প্রবাসী ভাইদের যাওয়া নিশ্চিত করতে সাউদিয়া ও বিমান যেন চলাচল করতে পারে, সে বিষয়ে কথা বলেছি।
বেবিচক চেয়ারমান বলেন, আমাদের বিমানও যেন যেতে পারে, সেই চেষ্টা করছি। বিমান থেকে জানতে পেরেছি, তারা এখনো অপারেশনের অনুমতি পায়নি। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আমরা সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশিদের ফিরে যেতে সাউদিয়া যে কয়টা ফ্লাইটের অনুমোদন চাইবে, আমরা দেব। তবুও যেন প্রবাসীরা ফিরে যেতে পারেন। একই সঙ্গে আমাদের বিমান বাংলাদেশও যেন যেতে পারে সেজন্য কাজ করছি।
"